ঢাকা: মানুষ তার স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে বেড়ে ওঠে। এ স্বপ্নই তাকে বাঁচিয়ে রাখে ও তাকে অনুপ্রাণিত করে।
শিক্ষা জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অনার্স ও ১৯৬৩ সালে মাস্টার্স শেষ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৬৮ সালে এমবিএ ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার স্কুল অব বিজনেস থেকে ১৯৭৬ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৩ সালে জ্ঞানগর্ভ ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক পেশার অধিকারী ড. মিয়ান শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ১৯৯৪ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও আইবিএর পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিরেক্টর ও অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর পপুলেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চের (সিপিএমআর) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনে পড়াশুনা ও নাইজেরিয়াতে ১৯৮১ সালে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে আহমাদু বালু বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এক সেমিস্টার কাজ করেন।
অধ্যাপক ড. মিয়ান আশির দশকে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে ইউএসএর ক্যানসাস স্টেইট ইউনিভার্সিটি (কেএসইউ), থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এটিআই) ও এজাম্পশান ইউনিভার্সিটির (এবিএসি) সহযোগিতায় আইইউবিএটি নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি। ১৯৯২ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে আইইউবিএটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক মিয়ান দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টিতে বহুবিধ কাজ করেছেন।
তিনি বাংলাদেশে ব্যবসা উন্নয়ন, শিক্ষা, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবার পরিকল্পনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি নীতি ইত্যাদি সংক্রান্ত ব্যাপক বিষয়ে ৫১টি রচনাসহ শিক্ষামূলক ১৫টি বইয়ের প্রণেতা ও সহযোগী প্রণেতা। বহুমুখী গবেষণা ও প্রজেক্ট কনসালটেন্সি ছাড়াও তিনি বিশ্বের বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে যোগদান করেন।
ড. মিয়ান সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর লেবার অ্যান্ড সোস্যাল সিকিউরিটি ল-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউশনস ইন সাউথ এশিয়ার (এমডিসা) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সদস্য ছিলেন। তিনি সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, ইতালি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট, ইউএসএ ছাড়াও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। তিনি একজন রোটারিয়ান এবং রোটারি ক্লাব অব গ্রেটার ঢাকার একজন সদস্য ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবং প্রিয় মাতৃভুমির উৎকর্ষ সাধনের প্রচেষ্টায় তিনি বিশ্বের প্রায় ৪০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছেন।
অধ্যাপক ড. মিয়ান ২০১৭ সালের ১০ মে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি শিক্ষাদানে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। জন্ম থেকে যে পারিবারিক আদর্শে তিনি বড় হয়েছেন তা তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সারাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। অর্থের অভাবে দেশের কোনো মেধাবী ব্যাক্তি যেন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না থাকে সেই উদ্যোগে কাজ করে গেছেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত।
আগামী সোমবার (১০ মে) অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়ানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। তার আদর্শ ও অনুপ্রেরণা থাকুক আমাদের ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২১
আরবি