ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার ভিডিও ভাইরাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার ভিডিও ভাইরাল ...

ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম কর্তৃক দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার ভিডিও ভাইরাল।

সোমবার (১৭ মে) রাতে ভাইরাল হওয়া ৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরে তাকে শাসাচ্ছেন।

আর ফেসবুক জুড়ে এই ঘটনার তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে কিভাবে একজন মানুষের গলা চেপে ধরতে পারেন। তিনি কোথায় এতো সাহস পেল গায়ে হাত দেবার। তার বিচার চাই।  

জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে পুলিশ দিয়ে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরে তাকে শাসাচ্ছিলেন। এসময় তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পড়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর রাত পৌনে ১২ টার দিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার নম্বর ১৬, দণ্ডবিধি ৩৯৭ এবং ৪১১ অফিসিয়াল সিক্রেসি এক্ট ১৯২৩ এর ৩/ ৫ এর ধারা মামলা করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। এই মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, সোমবার দুপুর ২.৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে রোজিনা ইসলাম নামে একজন নারী প্রবেশ করেন। এসময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। উক্ত নারী দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এসময় সচিব দপ্তরের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পান এবং বাধা দেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন মর্মে জানতে চান। এসময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপ-সচিব জাকিয়া পারভিন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমিন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহেদী ইমাম, অফিস সহায়ক মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে আসেন। অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ডকুমেন্টসের ছবিসহ মোবাইল উদ্ধার করেন। এতে প্রতিয়মান হয় যে, তিনি ডকুমেন্টসগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

এসময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়/সংগ্রহ সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়নের কাজ চলছে। সমঝতা স্বাক্ষর নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে প্রতিনিয়ত পত্র ও ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।

উক্ত নারী যে সকল ছবি তুলেছেন তার মধ্যে উল্লেখিত কাজপত্রও ছিল। এসকল তথ্য জনসমাগমে প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখিত কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরবর্তিতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অভিযোগ দায়ের করতে বিলস্ব হলো। অতএব এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।

আরও পড়ুন>> 

সরকারি নথি সরানোর অভিযোগে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা

রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে সাংবাদিকদের অবস্থান

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক করে থানায় দিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

 

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১     
জিসিজি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।