ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

সড়কের আতঙ্ক বেপরোয়া কিশোর বাইকার

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৬, মে ২০, ২০২১
সড়কের আতঙ্ক বেপরোয়া কিশোর বাইকার

সাভার (ঢাকা): দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এমন কোনো একটি দিন নেই, যেদিন আমাদের কানে আসেনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের কথা।

ঈদ বা কোনো উৎসব এলে এ খবর আরও বেশি শোনা যায়। বাইক দুর্ঘটনার কারণে কেউ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে আবার কেউ বা পরপারে চলে গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ মানুষ জানায়, বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার কারণ। অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরদের হাতে বাইক থাকায় প্রতিনিয়তই সড়ক ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব কিশোর বাইকাররা সড়কের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য আতঙ্ক।  

ঈদুল ফিতরের দিন শুক্রবার থেকে তিনদিনের ছুটিতে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে প্রায় ১৫টির বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার ভেতরে মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

জানা যায়, ঈদের পরের দিন শনিবার (১৪ মে) বিকেলে ধামরাইয়ে একটি শাখা সড়কে ৩ কিশোর একই মোটরসাইকেল উঠে ঘুরতে বের হয়। এরপর উচ্চগতি সামলাতে না পেরে ইটের স্তুপের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সাব্বির হোসনে সিয়াম (১৩) ও ইমরান (১৭) নামে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়। গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বাইজিদ (১৫) নামে আরেক কিশোর।

ওই দিনই ধামরাইয়ে কালামপুর-কাওয়ালীপাড়া সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজ্জাক (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আমিনুল (২২) নামে এক যুবক।

অপরদিকে সাভারের আশুলিয়ার জিরানি কিশোরের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়ার একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় (১৫ মে) রোববার আব্দুল আউয়াল (৫৬) নামে এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আশুলিয়া থানায়।

বুধবার (১২ মে) বিকেলে সাভারে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মিরা আফরিন (৩৫) নামে এক শিক্ষিকার।  

এছাড়াও আশুলিয়ার ভাদাইল, নিরিবিলি, বাইপাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটেই চলেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে সাভার বাইক রাইডার’স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জিহর আহমেদ জনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা রাইডার বা বাইক রাইড করি তারা সবাই সচেতনতার সঙ্গে বাইক চালাই। এমন কি আমাদের গ্রুপের সদস্যেদেরও সেই নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। বর্তমানে বিভিন্ন উৎসবে কিশোররা যে বাইক চালায় তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী তাদের পরিবার। পরিবার সন্তানদের খোঁজ রাখে না। এছাড়া একটি পরিবার ৫ লাখ টাকা দিয়ে বাইক কিনে দিতে পারে কিন্তু ৫ হাজার টাকা দিয়ে হেলমেট কিনে দেন না। একটি সার্টিফাইড হেলমেট দুর্ঘটনা থেকে অনেকাংশে বাঁচায়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে পরিবারের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

কথা হয় নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে উৎসবগুলোর সময় যদি কারো মোটরসাইকেল না থাকে তাহলে আত্মীয়দের কাছ থেকে মোটরসাইকেল নেয় কিশোররা। এরপর তারা তিনজন অতিরিক্ত চারজনও বাইকে উঠাই। বেপরোয়াভাবে অন্য কোনো মোটরসাইকেলের সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতা করে। এতে সড়কে থাকা পথচারী বা সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা জানে না কিভাবে একটি বাইক কন্ট্রোল করতে হয়। আমরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

সাভার ট্রাফিক পুলিশের (টিআই) আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, শুধু আমাদের ট্রাফিক না, ট্রাফিকের চেয়ে আরও বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ক্রাইম ডিভিশন থেকে। সমন্বয় করে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল। সড়কে তিনজন নিয়ে চালানো বেপরোয়া বাইকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা প্রায়শই এমন বাইক দেখলে মামলা দেই বা থানায় নিয়ে আটকে রেখে তাদের অভিভাবকদের ডেকে তাদের হাতে তুলে দিই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।