ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতে তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশি যুবক শনাক্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
ভারতে তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশি যুবক শনাক্ত

ঢাকা: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, ২০-২২ বছরের একজন তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩/৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে তদন্তে বেরিয়ে আসে নির্যাতনকারী এক তরুণ ও নির্যাতিত তরুণীর পরিচয়।

ঘটনাটি ভারতের কেরালায় হলেও ভিকটিম ও নির্যাতনকারীদের যুবকের একজন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তারা ভারতে অবস্থান করায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব করা হয়নি। তবে ভিকটিমসহ জড়িতদের ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

ডিএমপির তেজগাঁও পুলিশ জানায়, ভিডিওটি ধারণ করা হয় ভারতে। ওই ভিডিওতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডি তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।  

এরপর তার মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীসময়ে স্বীকার করে ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছে। এছাড়া মগবাজারের স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করেন, স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তেজগাঁও বিভাগে উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে রাজধানীর হাতিরঝিলের মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডি তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।

ভিডিওতে শনাক্ত হওয়া টিকটক হৃদয়ের মা ও মামা পুলিশকে জানান, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাসার কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।  

ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কৌশলে টিকটক হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপে থেকে হৃদয়ের ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সে জানান, গত তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটে ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে।

হৃদয় আরও জানান, ভিডিওর ভিক্টিম একজন বাংলাদেশি তরুণী। তার বয়স ২০-২২ বছর। তার বাসা হাতিরঝিল থানা এলাকায়। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিক্টিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায়।  

হৃদয় জানিয়েছেন, ভাইরাল হওয়া যৌন নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু জড়িত ছিল। ঘটনাটি ঘটে ভারতের কেরালায়।  

ডিসি বলেন, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পাওয়া। তরুণীর পরিবার নিশ্চিত করেছে মেয়েটি তাদের। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না।

হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়ের করা একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে।

হৃদয় বর্তমানে ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। হৃদয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যারা যৌন নির্যাতনে অংশ নিয়েছে তাদের পরিচয় শনাক্তকরণের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশি নাকি ভারতীয় নাগরিক তা যাচাই-বাছাই চলছে। বাংলাদেশি হলে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়েটি এবং তার স্থায়ী ঠিকানা শনাক্ত করা হয়েছে। তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীসময়ে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরে দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে এটি একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায় ও বিদেশে গমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করতেন।

হৃদয় ও ভুক্তভোগী তরুণীর পূর্বপরিচয় ছিল। মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদের ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।