ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে থমকে যাওয়া তিন শতাধিক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
জানা গেছে, ওইসব প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসেই শেষ হবে।
সাধারণত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আইএমইডির ওপর নির্ভর করে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর পর্যালোচনা সভা শেষে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করে থাকে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি সংস্থাটি।
আইএমইডি সূত্র জানায়, করোনা সংকটের কারণে প্রকল্পের গতি পায়নি। মেয়াদ বৃদ্ধির তিন শতাধিক প্রকল্পের মধ্যে ১৫০টি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল অথবা সরাসরি সভা করেছেন আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। মেয়াদ বাড়ানোর যৌক্তিকতা যাচাই করার জন্য সভা ছাড়াও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন সচিব। মে মাসেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব বেশি জমা পড়েছে আইএমইডিতে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ১১টি প্রকল্প নিয়ে সভা করবেন সচিব। দৈনিক ৮ থেকে ১০টি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সভা করা হচ্ছে।
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৩০০টির অধিক প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পের একই সমস্যা। প্রকল্পের যাচাই-বাছাইসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পর্যালোচনা সভা করছি। তবে অধিকাংশ প্রস্তাবই যৌক্তিক। কারণ করোনার কারণে প্রকল্পের ব্যয় হয়নি। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। লকডাউনের কারণে অনেক প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি। ফলে প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সময় বাড়ানোর ছাড়া কোনো উপায় নেই। মেয়াদ বৃদ্ধির অনেক প্রস্তাবনা যাচাই করার জন্য আমার টিম নিয়ে মাঠ পর্যায়েও পরিদর্শন করছি।
করোনা সংকটে চলতি অর্থবছরে শেষ করতে না পারা ৫৭ প্রকল্পসহ মোট ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া হচ্ছে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য। ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই ৩৫৬ প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্য নিয়েও শেষ না করতে পারা ৫৭ প্রকল্প রয়েছে। সার্বিকভাবে ৩৫৬ প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৩২৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ২৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে।
এই অর্থবছরে শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৮টি প্রকল্প রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০টি প্রকল্প রয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতের, ৩৫টি করে প্রকল্প রয়েছে কৃষি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতের।
এ ছাড়া পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ৩০টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৫টি প্রকল্প রয়েছে। ১১টি করে প্রকল্প রয়েছে শিক্ষা এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে। ৯টি করে প্রকল্প রয়েছে স্বাস্থ্য, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা এবং ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে। আটটি করে প্রকল্প রয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে। আর সাধারণ সরকারি সেবা খাতের প্রকল্প রয়েছে তিনটি। মূলত করোনা সংকটে প্রকল্পগুলো বেহাল দশায় পড়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার জন্য ৪৪২টি প্রকল্প নির্ধারিত ছিল। উল্লেখিত ৪৪২টি প্রকল্পের মধ্যে কোনোটি দুবার, কোনোটির মেয়াদ তিনবারও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও প্রকল্পগুলো শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। এসব প্রকল্পের কোনোটির কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে, আর কোনোটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা সংকটে সমস্যা আরো প্রকট দেখা দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। এদিকে করোনার মধ্যেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ১৭২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮৮৬।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
এমআইএস/এজে