ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসিকে এনআইডি কার্যক্রম ছেড়ে দিতে বলল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
ইসিকে এনআইডি কার্যক্রম ছেড়ে দিতে বলল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতীকী ছবি

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত ২৪ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারকে পাঠানো হয়েছে।

একই চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনআইডি হস্তান্তর সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা সম্বলিত চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে পাঠানো হলে, তার ভিত্তিতে ইসি সচিব ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে ওই নির্দেশনা দেওয়া হলো।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে
ক) সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রুল অব বিজনেস-১৯৯৬ এর রুল ১০ অনুসরণে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারীকৃত ২ আগস্ট ২০১৮ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো।

খ) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ ‘নির্বাচন কমিশন’ এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয়  সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া।

গ) সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক-১০ একেএম ফজলুর রহমানের গত ১৭ মে স্বাক্ষরিত এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করা সংক্রান্ত একটি চিঠির অনুলিপি ইসিতে আসার পর কর্মকর্তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার কাছে স্মারকলিপি দেন। তাদের দাবি এনআইডি ইসির অধীনেই রাখতে হবে। পরে এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, ইসির অধীনেই এনআইডি থাকবে বলে সিইসি আশ্বাস দিয়েছেন।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ বিষয়ে বলেন, কমিশন বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষে মতামত জানানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- (১) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের উদাহরণের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুরক্ষা সেবা বিভাগ ওই দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত বিধায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্ব সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং ডিফারেন্ট মিনস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিভিশন্স’-এ সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বসমূহের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(২) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ এ ‘নির্বাচন কমিশন’ এর পরিবর্তে সরকার শব্দ অন্তর্ভূক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

(৩) সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সংস্থাটি নাগরিকদের একটি পরিচয়পত্রও দেয়। পরবর্তীতে এনআইডি অনুবিভাগ তৈরি করে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় স্মার্টকার্ড প্রকল্পও হাতে নেয়। এজন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন করে বর্তমানে ভোটার তালিকার ভিত্তিতে দেশের সকল নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ করে আসছে ইসি। সংস্থাটির তথ্য ভাণ্ডারে প্রায় ১১ কোটি ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে।

এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১৪০ ধরণের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিতি যাচাই করে দিচ্ছে ইসি। আর এ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে ইসি।

কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১৪ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। চাকরি জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ব্যয় করেছেন এর পেছনে। তারা কোনোভাবেই এটি অন্য দফতরের হাতে দিতে চান না।

নির্বাচন কমিশন ৫ শতাধিক থানা নির্বাচন অফিস, ৬৪ জেলা নির্বাচন অফিস, ১০ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে সার্ভার বসিয়ে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
ইইউডি/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।