খুলনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ও ভরা পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। সে বাঁধ মেরামতের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন হাজারো স্থানীয় বাসিন্দা।
শাকবাড়িয়া নদীর উত্তর মঠবাড়ী মোসলেম সরদারের বাড়ির পাশের প্রায় ৬০ ফুট ভাঙা বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে অস্থায়ীভাবে মেরামত করেছেন তারা। বাঁশ, মাটি, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে মহারাজপুর, মঠবাড়ী, কয়রা, শ্রীরামপুর, অর্জুনপুর, পল্লীমঙ্গল সহ কয়রা উপজেলার ১০ থেকে ১৫ গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষ এ কাজে অংশ নিয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ মে) ভোরের আলো ফোটার আগেই এসব গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন ভাঙা বাঁধের কাছে। বিরতিহীনভাবে চলে তাদের কাজ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধ মেরামতের কাজে অংশ নিতে গ্রামবাসীকে আহ্বান করে মাইকিং করা হয়।
বুধবার ও বৃহস্পতিবারের প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়রার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের। পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে গ্রামগুলোতে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গ্রামবাসী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অনেক বাঁধের কোনো কিনারা হয়নি।
মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়রাবাসীর ঘুমের মধ্যেও বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক জেকে বসেছে। সিডর, আইলা, আম্পানে ক্ষত বিক্ষত বেড়িবাঁধগুলো এখনও ফিরে পায়নি হারানো অস্তিত্ব। এর মধ্যে আবার ইয়াসের হানা। কয়রার নাজুক বেড়িবাঁধে আবার ভাঙন লাগে। টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী মেগা প্রকল্প গৃহীত না হওয়ায় বার বার আমরা নোনা পানিতে ডুবি।
তিনি জানান, শুক্রবার ভোর থেকে বাঁশ, মাটি দিয়ে মহারাজপুর, মঠবাড়ী, কয়রা, শ্রীরামপুর, অর্জুনপুর,পল্লীমঙ্গল সহ কয়রা উপজেলার ১০ থেকে ১৫ গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ৬০ ফুট বাঁধ মেরামত করছেন।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, সিডর, আইলা, আম্পানসহ বড় বড় দুর্যোগে ভেঙে যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ। একারণে বার বার এ উপজেলার মানুষকে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতায় জীবনযাপন করতে হয়। ইয়াসের প্রভাবে আবারও কয়রা বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। শুক্রবার ভোর থেকে হাজারো গ্রামবাসী মিলে একতা গড়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের অসাধ্য সাধন করার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে ভাসছে কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম। বুধবার দুপুরে ঘূণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া উত্তর বেদকাশির গাতীরঘেরি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বুধবারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে থাকে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশির আংটিহারা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের অর্ধ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুন করে ভেঙে যাওয়ায় কয়রা খুলনা সড়কের কালনা ও অন্তাবুনিয়া গ্রামে ৩ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ৫টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেলেও প্লাবিত হয়েছে ৪টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে মহারাজপুর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম সহ উত্তর বেদকাশি ও কয়রা ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম এখন লবন পানিতে ভাসছে । উত্তর বেদকাশি গাতিরঘেরী, বিনাপানি, পদ্দপুকুর ও হরিহরপুর গ্রামে ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিল পরিমাণ জায়গা না থাকায় অধিকাংশ মানুষের ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধের খোলা আকাশের নিচে। অনুরূপ উত্তর ও দক্ষিণ মঠবাড়ী গ্রামে ভাসমান মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় না পেয়ে বেড়িবাঁধে উঠেছেন। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হাজারো চিংড়ি ঘের, শতশত বাড়ি ঘর ভেসে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২১
এমআরএম/এমআরএ