ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রিপ কুষ্টিয়া টু মৌলভীবাজার

‘ট্রাকে দু’জন চালক অবশ্যই থাকতে হয়’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
‘ট্রাকে দু’জন চালক অবশ্যই থাকতে হয়’ মৌলভীবাজারে আসা কুষ্টিয়া রুটের ট্রাক। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সড়ক পরিবহন। এমন পরিবহনেই প্রসারিত হয় বিপণন ব্যবস্থা।

জমে উঠে ব্যবসা-বাণিজ্য। দেশব্যাপী সড়ক পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ট্রাক। এই ট্রাকই নানা ধরনের পণ্য দেশের একপ্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছানোর কাজটি করে।   এই ট্রাক সংশ্লিষ্টদের অর্থাৎ ট্রাকের চালক, হেলপারদের জীবন জীবিকা অন্য পেশার জীবন জীবিকা থেকে পৃথক। পরিবার-পরিজন ফেলে টানা কয়েকটি দিন ট্রাকের স্টিয়ারিং ধরেই কাটিয়ে দিতে হয়। মহাজনের নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পৌছে দিতে গিয়ে আধো ঘুমন্ত চোখে দুর্ঘটনায় আবার প্রাণও যায় কারোর করোর। তবু থেমে নেই ট্রাকের যান্ত্রিক গতির মধ্য জীবনের এই আটপৌরে গতিকে মেলানোর নিরন্তর এই চেষ্টা। তাতেই টিকে থাকার সংগ্রাম। এগিয়ে যাওয়ার গতি।

মৌলভীবাজার শহরে শনিবার (২৯ মে) সকালে দেখা গেল ৬ টনের একটি ব্র্যান্ড রানার ট্রাক ব্যস্ততম রাস্তার একটি কোণে দাঁড়িয়ে। আলাপকালে জানা যায়, সুদূর কুষ্টিয়া বিআরবি কোম্পানি থেকে কাঁচ/গ্লাস নিয়ে এসেছে।

গাড়ির চালক মো. শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা ৭টা/৮টায় কুষ্টিয়া থেকে রওয়ানা হলে মৌলভীবাজার পরের দিন সকাল ৭টা/৮টায় পৌঁছানো যায়। গাড়ি প্রায় ৪০ থেকে / ৮০ কিলোমিটারে গাড়ি অবস্থা বুঝে টানতে হয়। তবে রাত্রে সড়কে দিনের মতো নানান ঝামেলা কম থাকে। আয়-রোজগার সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে তো মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০/৫০ হাজার টাকা থাকতো, এখন ২০/২৫ হাজারের বেশি টাকা থাকে না। করোনোর কারণে মানুষের রুটি-রুজির পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে।

ট্রাকের চালক সম্পর্কে শান্ত বলেন, ভাইরে, একেকটা ট্রাক ২/৩ দিন বা তারও বেশি সময় নিয়ে দেশের দূর-দূরান্তে যায়। একজন চালক এক টানা ৫/৬ ঘণ্টা গাড়ি চালতে পারে। এর বেশি আর পারে না। তখন তার একজন সহকারী চালক প্রয়োজন হয়। যে ট্রাকে ব্যস্ততা বেশি অথচ দুই জন চালক নেই, সে গাড়িগুলো সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। সারা রাত গাড়ি চালানোর পর ভোরের দিকে ঘুম চলে আসে। তখনই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। এজন্য প্রতিটি ট্রাকে ২ জন চালক থাকতে হয়। এই ট্রাকে আমরা দু’জন চালক আছি। ৪/৫ ঘণ্টা টানা গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত হলে অপর জন ট্রিয়ারিঙে আসে। এভাবে আমরা কাজ করি।

ট্রাকের অপর চালক রূমন ইসলাম বলেন, দূরের ট্রিপে গেলে নিজের পরিবারের সঙ্গে ৫/৬ দিন দেখা সাক্ষাৎ থাকে না। গাড়িতেই দিন-রাত কাটে। দিনে এলে তো ট্রাফিক-পুলিশকে জায়গায় জায়গায় টাকা দিতে হয়। এজন্য আমরা রাতে রওয়ানা হই। ন্যূনতম ২০০ টাকা থেকে শুরু। এরপর যার কাছ থেকে যত টাকা নিতে পারে।

কুষ্টিয়া থেকে মৌলভীবাজার ৫/৬ টনের ট্রাক ভাড়া প্রায় ২০ হাজার। ট্রাক পরিবহনে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধ হলে পরিবহন ভাড়া কমতো।

ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীসহ আমাদেরও লাভ হতো বলে জানান রূমন।

মাঝেমধ্যে এমন হয় যে, মহাজনের (ট্রাকের মালিক) কড়া নির্দেশ মতো আরেকজন ড্রাইভার ছাড়াই আমাকে একাই মালবাহী ট্রাক নিয়ে ৩/৪ দিনের জন্য বের হতে হয়। তখন আমি ৪/৫ ঘণ্টার গাড়ি চালানোর পর গাড়ি সাইড করে ২/৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেই। ঠিকমত ঘুম না হলেই বেশিভাগ ক্ষেত্রে ট্রাকের দুর্ঘটনার ঘটে। আমার জীবনের জন্য পণ্যগুলো মূল্য বেশি নয়। সচেতনার অভাবে আমি মারা গেল আমার পরিবারের কি হবে? বলে জানান কুষ্টিয়ার ট্রাকচালক শান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।