ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর এলাকার দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির পাশাপাশি 'অটুট বন্ধন' নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে জনসাধারণকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ওমর ফারুক।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে গ্যাস বিল নেন ওমর (৩২)।
রোববার (৬ জুন) দিনগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৪।
সোমবার (৭ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তিতাসের বিল আত্মসাৎকারী ও জালিয়াতির মূলহোতা ফারুককে চট্টগ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি মিরপুরের ১৫শ’ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেন।
ফারুক ২০১৮ সাল থেকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিলের টাকা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু গত প্রায় ২ বছর ধরে ওমর ফারুক গ্রাহকের গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রহকের গ্যাস সংযােগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিং এর পরপরই ভুক্তভােগী গ্রাহকরা প্রতারক ফারুকের ও তার প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে গ্রাহকদের মধ্যে জানাজানি হলে গত ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে। ওমরসহ তার অন্য সহযােগীরা আত্মগােপনে চলে যান।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভােগী মিরপুর মডেল থানায় (২ ফেব্রুয়ারি) মাে. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এরপর র্যাব-৪ তদন্ত শুরু করে।
ওমর ফারুকের উত্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, নােয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ওমর। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে এসে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যাবসা শুরু করেন। প্রতারণার উদ্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে পাঁচটির বেশি অ্যাকাউন্ট খােলেন। পরবর্তীকালে তিনি ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ‘ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, তার সঙ্গে তিতাসের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানিয়ে দিবো।
তিনি আরো বলেন, তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডরিং মামলাও প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।
*** তিতাস গ্যাস বিলের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মূল হোতা আটক
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২১
এমএমআই/এনটি