ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডা. সাবিরা ‘খুন’: জিজ্ঞাসাবাদেই আটকে আছে তদন্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
ডা. সাবিরা ‘খুন’: জিজ্ঞাসাবাদেই আটকে আছে তদন্ত

ঢাকা: রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পার হলেও এখনো পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। তাকে খুন করা হয়েছিল বিষয়টি নিশ্চিত হলেও খুনের কারণ কিংবা হত্যাকারীর বিষয়ে কোনো ধারণা পায়নি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, হত্যা মামলাটি তদন্তের এ পর্যায়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এখনো এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তদন্তের প্রয়োজনে সন্দেহভাজনসহ ডা. সাবিরার পরিচিতজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঘটনার পর ওই ডাক্তারের বাসার সাবলেট থাকা তরুণী ও বাসার নিরাপত্তারক্ষীসহ কয়েকজনকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো ক্লু নেই, তাই কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখছে না পুলিশ। প্রয়োজনে যে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিহতের ভাড়া বাসায় কার কার যাতায়াত ছিল কিংবা অপরিচিত কারো যাতায়াত ছিল কিনা জানার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে সাবিরার ভাড়া বাসা ও আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। দূরের কয়েকটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেসব ফুটেজে তেমন কোনোকিছুই স্পষ্ট নয়।

এদিকে ঘটনার দিনই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট মরদেহের শরীরে, দরজায় ও চেয়ারে একাধিক জনের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছে। আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ও ঠাণ্ডা কফির মগ।

পরিবারের সঙ্গে নিহত সাবিরার দূরত্বের কারণও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, ডাক্তার সাবিরা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন তবে তার স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ছিল। স্বামীর অবর্তমানে নিহতের বাসায় কারো যাতায়াত ছিল কিনা, কারো সঙ্গে বিশেষ ফোনালাপ হতো কিনা তাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরকীয়া, ডাকাতি ও পারিবারিক দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিয়ে ক্লু খোঁজা হচ্ছে। ছেলেকে নিয়ে তিনি সম্প্রতি কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ডাক্তার সাবিরার অবসর সময় কীভাবে কাটতো ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তদন্তের প্রয়োজনে ডাক্তার সাবিরার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীসহ যাকেই প্রয়োজন হচ্ছে তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।

ডাক্তার সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের ৩৫ ঘণ্টা পর রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা ও হত্যার আলামত নষ্ট চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ডা. সাবিরার মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল।

মামলায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করলেও বাদীর সন্দেহ চিকিৎসক লিপির ভাড়ার বাসার সাবলেটে থাকা বাসিন্দা মডেল কানিজ সুবর্ণাকে ঘিরে।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমার বোনের মরদেহ দেখে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, গত ৩০ মে রাত আনুমানিক ১০টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যবর্তী সময়ে অজ্ঞাতনামা আসামিরা তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাত ও তীক্ষ্ণ অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আলামত নষ্ট করতে শরীরে ও বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ খুনের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে সাবলেটে থাকা কানিজ সুবর্ণা অথবা অন্য কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে মর্মে আমার দৃঢ় সন্দেহ হয়।

সূত্র জানায়, কানিজ সুবর্ণা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে মডেলিংয়ের পাশাপাশি দারাজ অনলাইনে কাজ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কানিজ সুবর্ণা ডাক্তার সাবিরার ভাড়া বাসায় সাবলেটে উঠেন।

ডাক্তার সাবিরার মরদেহ উদ্ধারের পর সুবর্ণাকে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবলেটের কানিজকে খুনি বলার মতো কোনো প্রমাণ নেই। বাদী সন্দেহ করতেই পারেন, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খুনিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

গত ৩১ মে কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে ডাক্তার সাবিরার রক্তাক্ত ও দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পিঠে দু’টি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। আলামত সংগ্রহের পর ক্রাইম সিন ইউনিট জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।

আরও পড়ুন...
** চিকিৎসক সাবিরা লিপি হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের
** চিকিৎসক সাবিরার বুক থেকে নিচের সম্পূর্ণ অংশ পোড়া ছিল
** চিকিৎসক লিপিকে হত্যার পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়
** নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার, ৪ জন ডিবি হেফাজতে
** ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকে চিকিৎসক লিপির মরদেহ
** চিকিৎসকের গলায়-পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে
** গ্রীন লাইফের নারী চিকিৎসক খুন

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।