ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কোলাহলের শহরে সুনশান নীরবতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
কোলাহলের শহরে সুনশান নীরবতা

রাজশাহী: সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর দ্বিতীয় দিনেও রাজশাহীতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে কোলাহলের শহরে নেমে এসেছে সুনশান নীরবতা।

মহানগর পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স সদস্যদেরও লকডাউন কার্যকরে মাঠে নামানো হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে তারা মহানগর পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন। ফলে সেভাবে কেউই ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না। কাঁচাবাজার, খাদ্য পণ্য ও ওষুধ কেনার মতো জরুরি প্রয়োজনে যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। যথাযথ কারণ দেখাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তাই বিভাগীয় শহর রাজশাহীর পথঘাট এখন প্রায় জনশূন্য। ফাঁকা সড়কে রয়েছেন কেবল পুলিশ সদস্যরা। শহরের তিনটি প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। রাস্তায় দুই-একটি রিকশা, মোটরসাইকেল এবং জরুরি সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। বন্ধ রয়েছে শহরের সব মার্কেট, বিপণিবিতান এবং সব ধরনের দোকানপাট। লকডাউনের কঠোরতায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারেই মন্থর হয়ে পড়েছে। অতিমারির মধ্যে শহরের জনবহুল পথঘাট খাঁ খাঁ করছে।

শনিবার (১২ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরের শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, নিউমার্কেট, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড়, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি জনবহুল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট একেবারেই মানুষ নেই। মূল সড়কে পিকআপ ভ্যান নিয়ে এবং পাড়া-মহল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ে টহল দিচ্ছে পুলিশ।

তবে নিত্যপণ্যের দোকান, ওষুধের ফার্মেসি ও পেট্রোল পাম্প, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠান আগের মতোই খোলা রয়েছে। এছাড়া সব ধরনের ব্যবসায়ী দোকানপাট সকাল থেকে বন্ধ দেখা গেছে।

রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায় কেউ রাস্তায় বের হলে পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। জরুরি কাজ থাকলে পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার নির্দেশনা দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। শহরের তিন দিকের প্রবেশমুখ আমচত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা ও কাটাখালী এলাকায় পুলিশ  সদস্যরা ব্যারিকেড দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পয়েন্ট মানুষ ও যানবাহনের অবাধ প্রবেশ ঠেকাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে মহানগর পুলিশ। পণ্যবাহী পরিবহন, পিকআপ ভ্যান ও মালবাহী ট্রাক ছাড়া কিছুই রাজশাহী শহরে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ অহেতুক বাইরে ঘোরাঘুরি করলে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তির মুখেও পড়তে হবে। তাই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তিনি সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান।

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে সাত দিনের সর্বোচ্চ ‘লকডাউন’ চলছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে এই বিশেষ লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এই সর্বাত্মক লকডাউন বলবৎ থাকবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জেলার নয় উপজেলায়ও এই বিশেষ লকডাউন চলছে। স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা লকডাউন পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করছেন খোদ রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল। লকডাউন কার্যকরের পর থেকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

লকডাউন ঘোষণার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো আব্দুল জলিল জানান, লকডাউনের সময় সব ধরনের ব্যবসায়ীক দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁসহ আশপাশের অন্য কোনো আন্তঃজেলা থেকে যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। রাজশাহী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরের জেলায়ও যেতে পারবে না। এছাড়া রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ সব দূরপাল্লার রুটের বাস ও অন্যান্য যানবাহন এবং যাত্রীবাহী সকল আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রাজশাহীর আম পরিবহনকারী ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ এবং পণ্যবাহী ট্রেন আগের মতই চলবে। এছাড়া রোগী, খাদ্য, জরুরি ওষুধ ও পণ্যবাহী পরিবহনসহ অন্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ সরবরাহকারী পরিবহন ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

রাজশাহীতে আমের মৌসুম চলছে। তাই আমের বাজারগুলো এখন বড় পরিসরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।