ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিন প্রজন্ম ধরে সেতুর অপেক্ষা   

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
তিন প্রজন্ম ধরে সেতুর অপেক্ষা   

গাইবান্ধা: ছোটবেলায় বাবা-দাদার সঙ্গে নৌকায় নদী পারাপারের সময় তাদের মুখে শুনতেন, একটি সেতুকে ঘিরে নানা স্বপ্নের গল্প। একই স্বপ্ন বুকে লালন করে বয়স পঞ্চাশ পেরুলেও অধরাই রয়ে গেছে সেই স্বপ্ন।

 

এভবেই কাঙ্ক্ষিত একটি সেতুকে ঘিরে তিন প্রজন্মের আক্ষেপের গল্প বলছিলেন আমিনুল ইসলাম রিন্টু। তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। ওই ইউনিয়নের হাজিরঘাট এলাকায় করতোয়া নদীর ওপর একটি সেতুর স্বপ্ন দেখে আসছেন তিন উপজেলার লাখো মানুষ। কেউ জানেন না এ অপেক্ষোর শেষ কোথায়।


 
এ হাজিরঘাট থেকে দক্ষিণে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা তিন কিলোমিটার, উত্তরে পলাশবাড়ীর কাশিয়াবাড়ী বাজার পাঁচ কিলোমিটার ও দক্ষিণে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ চতরা হাট নয় কিলোমিটার। হাট-বাজার, লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ নানা কাজে প্রতিদিন তিন উপজেলার হাজারো মানুষ নৌকায় হাজিরঘাট পারাপার হয়ে থাকেন। এতে তিন প্রজন্ম ধরে টানা বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আসছেন তারা।
 
ভুক্তভোগীরা জানান, হাজিরঘাটে একটি সেতুর অভাবে সারা বছর তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নৌকা ছাড়ার আগে ঘাটে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে আশঙ্কাজনক রোগী পারাপারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে হয়। এতে রোগীর অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হওয়া ছাড়াও অনেক সময় তীরে বা নৌকাতেই রোগী মারা যান।
 
তারা জানান, সঙ্গে বাইসাইকেলসহ দ্রুতগতির অটোরিকশা-ভ্যান বা মোটরসাইকেল থাকলেও সময় গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো উপায় থাকে না নিরুপায় মানুষগুলোর।
 
ভূক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বর্ষাকালে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নদীতে পানি বাড়ায় নৌকায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা ডুবির আশঙ্কার পাশাপাশি এতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটে।
 
ভুক্তভোগী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক কৃষক এমন আছেন যে বাড়ি নদীর এপাড়ে কিন্তু জমি নদীর ওপাড়ে। জমি থেকে ফসল ঘরে তুলতে বেশ বেগ পেতে হয়। অপরদিকে, ব্যবসায়ী বিভিন্ন হাটে পণ্য কেনাকাটা ও পরিবহনে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন বলে জানান।

পণ্যবাহী ভ্যানচালক-শ্রমিকরা জানান, বালুর মধ্যে গাড়ি চলতে চায় না। চাকা দেবে বালুতে আটকে যায়। ঘাট থেকে ঠেলে সড়কে তুলতে জীবন বাজি রেখে শরীরের সঞ্চিত সবটুকু শক্তি খরচ করতে হয়।  


 
কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বাংলানিউজকে জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে যিনিই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, প্রত্যেকের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এ সেতুটি নির্মাণ করার। সে প্রতিশ্রুতিতেই এলাকার মানুষ তাদের ভোট নিয়েছেন কিন্তু পরে তারা কথা রাখেন নাই। বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি সম্প্রতি হাজিরঘাট পরিদর্শন করেছেন এবং এখানে সেতু নির্মাণের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।  
 
এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন বাংলানিউজকে জানান, হাজিরঘাটে একটি সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। সেতুটি যেন হয়, সে লক্ষ্যে বিষয়টি ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নতুন একটি প্রকল্পে এ সেতুটি অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই আনুমানিক দুইশ’ মিটার দীর্ঘ সেতুর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।