ঢাকা: করোনার সংক্রমণ রোধে প্রশাসন ঘোষিত ‘লকডাউনে’ বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তবে প্রায় সব অফিস খোলা থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া জনসাধারণ।
এ দফা ‘লকডাউনের’ প্রথম দিন সোমবার (২৮ জুন) বিপুল সংখ্যক মানুষজনকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। তবে এদিন রাতেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কথা জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাধ্য হয়ে অনেককেই মোটরসাইকেলে যাত্রী হয়ে উঠতে দেখা গেছে। তাদের বক্তব্য, অফিস খোলা রেখে সব পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় এছাড়া আর উপায় নেই।
এদিকে পুলিশও বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল আটকাতে দেখা গেছে। যাত্রী পরিবহনের দায়ে বিভিন্ন অঙ্কের মামলা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
অফিস যেতে রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন মোস্তাফিজ নামে একজন। তার বাসা মিরপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় আর অফিস মতিঝিলে। সেখান থেকে রিকশায় শ্যামলী পর্যন্ত এসেছেন। এখান থেকে আবার কীভাবে যাওয়া যায় সেই উপায় খুঁজছিলেন তিনি।
বেসরকারি চাকরিজীবী মোস্তাফিজ বলেন, সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়েছি অফিস যাব বলে। বের হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও একটা সিএনজিও পেলাম না। পরে বাধ্য হয়ে রিকশা দিয়ে শ্যামলী পর্যন্ত আসতেই বেলা ১১টা। জানি না ঠিক কখন মতিঝিল গিয়ে পৌঁছাবো বা কীভাবে পৌঁছাবো?
'লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ মানলাম, তাহলে সরকার অফিস খোলা রাখলো কেন? যদি অফিস খোলাই থাকবে তাহলে মানুষগুলো কীভাবে যাবে? রিকশায় আশপাশে যাওয়া যায় কিন্তু দূরের যাত্রীদের ক্ষেত্রে ভোগান্তি আর মোটা অঙ্কের খরচ ছাড়া কিছুই না। ’
কথার মধ্যেই অবশেষে তিনিও এক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দরদাম করে আড়াইশ টাকায় মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা দেন।
নিষেধাজ্ঞার পরও মোটরসাইকেলে যাত্রী হিসেবে চড়ার বিষয়ে সাদ নামে একজন বলেন, দেড় ঘণ্টা ধরে অফিসের কাজে উত্তরা যেতে অপেক্ষা করছি। দুই সিএনজি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই একজন ৫০০ ও একজন সাড়ে ৫০০ টাকা চাইলো। এ অবস্থায় আমি যাবো কীভাবে?
এ যে ‘লকডাউন’ দেওয়া হলো কিন্তু সব অফিস খোলা। কিছু অফিস তাদের কর্মীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি দিয়েছে কিন্তু বাকিরা কী করবে? ‘লকডাউন’ কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় প্রাইভেটকারের জ্যাম। যাদের গাড়ি আছে তারা ঠিকই চলাফেরা করছেন। তাহলে এ ‘লকডাউন’ কী শুধু গরিবের ‘লকডাউন’?
প্রায় প্রতি সড়কেই মোটরসাইকেলে দু’জন থাকলে ট্রাফিক পুলিশ আটকাচ্ছেন জানিয়ে মাহবুব নামে একজন মোটরসাইকেলচালক বলেন, বাইকে আরেকজন থাকায় সকালে বিজয় স্মরণীতে দুই হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয় আমাকে। আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার এ সময়ে দুই হাজার টাকার মামলা জুলুম ছাড়া কিছুই না। তারপরও ফাঁকফোকর দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি।
বনানী এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, মোটরসাইকেলে দু’জন উঠা যাবে না বলে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
মিরপুর ১২ নম্বর রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলচালক মো. নজরুল বলেন, সকাল বেলা ট্রাফিক পুলিশ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল থামিয়ে ডাবল যাত্রী বহন করায় মামলা দিয়েছে। একইসঙ্গে কিছু মোটরসাইকেল ছেড়ে দিচ্ছে। মূলত প্রশাসনের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে মোটরসাইকেল থামানো।
রাইড শেয়ারিং চালক বখতিয়ার বলেন, সকাল ১১টার দিকে যাত্রী বহন করায় দুই হাজার টাকার মামলা খেয়েছি। আবারও যদি যাত্রী নেওয়া অবস্থায় পুলিশ ধরে তাহলে মামলার ওপরে আবারও মামলা দেবে।
পল্লবী এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট সেলিম রেজা বলেন, পারিবারিক সদস্য ও জরুরিসেবা সংযুক্ত ব্যক্তিদের আমরা ছাড় দিয়েছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোটরসাইকেলের একাধিক ব্যক্তি যাতায়াত করতে দেখলে মামলা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২১
পিএম/এমএমআই/আরবি