ঢাকা: চলমান বর্ষা মৌসুমে রাজধানী জুড়ে বেড়েছে মশার প্রকোপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার (১০ জুলাই) থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
শুক্রবার (৯ জুলাই) ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির সম্ভাব্য পদক্ষেপ জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, মশক পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে সবসময়ই আমরা সচেষ্ট আছি এবং আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। তবুও বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিতে আগামীকাল (শনিবার) থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত আবারও চিরুনি অভিযানে যাচ্ছে ডিএনসিসি। এটা ১৯ জুলাই পর্যন্ত টানা আট দিন (মাঝে এক শুক্রবার বাদ দিয়ে) চলবে যেহেতু ২০ তারিখ থেকে ঈদুল আজহার ছুটি। এ অভিযানে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের সবগুলোতে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, অফিস, নির্মাণাধীন ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় এক হাজার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরও প্রায় দেড় হাজার কর্মী নিয়ে মোট আড়াই হাজার কর্মী এ অভিযানে কাজ করবেন। অভিযানের প্রথম দিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ডিএনসিসির মেয়র উপস্থিত থাকবেন।
অভিযানে কী কী বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন কিউলেক্স মশা মূলত নোংরা পানিতে হয়। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের অনেক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক যে এডিস মশা সেটি হয় পরিষ্কার পানিতে যা মানুষের বাসাবাড়িতে জমা পানিতে দেখা যায়। এজন্য নগরবাসীর দায়িত্ব অনেক। এজন্য তাদের সচেতন হতে হবে। আর আমরা সেই কাজটি করতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ নগরবাসী সচেতন না হলে লার্ভিসাইড স্প্রে (সকালে) এবং এডাল্ডিসাইড ফগিং (বিকেলে) করেও লাভ নেই।
তিনি বলেন, আমরা এজন্য নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আজ হয়তো ১০ শতাংশ সচেতন হচ্ছে কাল আরও ১০ শতাংশ হবে। জনগণ সচেতন হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ৮০ শতাংশ ভালো হয়ে যাবে। যারা এরপরেও শুনছেন না, তাদের জেল ও জরিমানা করা হচ্ছে। গত জুন মাসের ১ থেকে ১২ তারিখের অভিযানে মোট ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া একটি নির্মাণাধীন ভবনের প্রকৌশলীকে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়েছে।
মশক নিধনে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান জোবায়দুর রহমান বলেন, মশক নিধনে আমরা প্রযুক্তিরও সাহায্য নিচ্ছি। প্রতিবারের অভিযানের ফলাফল একটি অ্যাপে আমরা সংরক্ষণ করি। সেটার ডাটাবেজ থেকে আমরা আগের অভিযানগুলোতে যেসব স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা বা লার্ভা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ পেয়েছি সেসব স্থাপনার মালিকদের সচেতনতামূলক এসএমএস পাঠিয়েছি। আগে যেসব স্থাপনায় আমরা মার্কিং করে এসেছিলাম সেগুলোতে আবার যাবো। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং আধা-সরকারি অফিসগুলোতে সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছি। অনেক সময় আমরা নির্মাণাধীন ভবনে এমন পরিবেশ পাই তাই রিহ্যাব নেতাদের সঙ্গে মেয়রের নেতৃত্বে সভা করা হয়েছে। গত মাসের ১৩ থেকে ১৭ তারিখ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের ইমাম এমন ব্যক্তিদের সিডিসির সহযোগিতায় মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি যেন শুক্রবারের জুমার নামাজের খুতবায় ডেঙ্গু, করোনা এসব বিষয়ে সতর্কতামূলক বয়ান দেন খতিব সাহেবেরা। এছাড়াও যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা আছেন সেসব হাসপাতালের বাইরে বিশেষ ব্যবস্থায় ওষুধ দেওয়া আছে। রোগীদের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাসার আশেপাশে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কোথাও মশার প্রজননস্থল রয়েছে কী না দেখা হচ্ছে।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা চেয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সবসময়ই বলি যে, এটা অভিজাত এলাকার মশা। তাই আমাদের সবাইকে সবার আগে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, ডিএনসিসি খুবই আন্তরিক যেকারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনও সেভাবে খারাপ নয়। সিটি করপোরেশনের এবং নগরবাসীর এতদিনের কাজেরই সুফল এটা। বাকি যেটুকু আছে সেটাও আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করবো। তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। এটাই হচ্ছে ম্যাসেজ (বার্তা)। যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু সিটি করপোরেশন কঠোর। আগেও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, আগামীতেও নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২১
এসএইচএস/আরআইএস