ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে হারানোর দিন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে হারানোর দিন

ঢাকা: আধুনিক জাতীয় সংসদের রূপকার স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে হারানোর দিন শনিবার (১০ জুলাই। ২০০১ সালের এ দিনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন অকুতোভয় একজন দেশপ্রেমিক। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সফল স্পিকার, সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ঝানু কূটনীতিক।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুর রশীদ চৌধুরী এবং মাতা সিরাজুন্নেসা চৌধুরী। বাবা-মা দু’জনেই ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ।

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন রক্ষা করেন। একইসঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় লোকসভায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বক্তৃতা করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মচারীদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা দেন। ফলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৫১ ব্যাচের ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে জ্যেষ্ঠতা পান। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জাতির পিতার সঙ্গে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ঘাতকের হাতে নিহত হলে তাঁর দুই কন্যার আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিকে তিনি নিজের দায়িত্ব হিসেবে মনে করেন।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামে। দেশে না থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের জার্মানিতে (তখনকার পশ্চিম জার্মানি) আশ্রয় দেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭৫ সালে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন তিনি।

শেখ হাসিনা ও রেহানাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। ঘাতকেরা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রদূত থেকে প্রত্যাহার করে দেশে এনে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান তিনি। পরে তাঁকে ওএসডি করে দেশে নিয়ে আসা হয়।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব দেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকারের দায়িত্ব পালনকালে মারা যান।  

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সর্বদা উজ্জ্বল এবং অমর হয়ে থাকবেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়:০২০০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১
আরকেআর/এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।