লালমনিরহাট: নিজ বাড়িতে সালিশ বৈঠকে ব্যবসায়ীকে স্ত্রী সন্তানের সামনে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলীর বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় নির্যাতিত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান অভিযুক্ত করে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
নির্যাতিত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোপাল রায় গ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে।
লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের মেয়ে ইছমোতারা বেগমের সঙ্গে ৫ বছর আগে বিয়ে হয় বিকাশ ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমানের। বিয়ের পরে তাদের সংসারে আদম আলী (৩) নামে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। গত ৩ জুলাই বাবার বাড়ি বেড়াতে যায় স্ত্রী ইছমোতারা। বেড়াতে গিয়ে ফিরে না আসায় মোবাইলে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে বিবাদ লাগে।
এ ঘটনায় স্ত্রী ইছমোতারা পলাশী ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে গত শনিবার (১০ জুলাই) মৌখিকভাবে বিচার প্রার্থী চান। ওই দিন রাতেই তার সন্তান অসুস্থতার কথা বলে ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমানকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী। এরপর নিজ বাড়িতে মধ্যরাতে সালিশ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মোখলেছুরকে মারধর ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে দেড় লাখ টাকার ডিপিএস করতে হবে বলে সালিশে রায় ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান।
রায় ঘোষণার পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে বৈঠকে স্ত্রী ও সন্তানের সামনে পাকা মেঝেতে ফেলে লোহার রড দিয়ে মোখলেছুরকে অমানুষিক নির্যাতন করেন তার মামাশ্বশুর প্রবাসী আব্দুস সাত্তার। বাবার চিৎকারে শিশু সন্তান আদম আলী কান্না শুরু করলেও বৈঠকের রায় থেকে পিছপা হননি চেয়ারম্যানসহ কথিত মাতব্বররা।
এরপর মোখলেছুরের বাবাকে মোবাইলে ডেকে নেন চেয়ারম্যান। সেখানে জোরপূর্বক সাদা কাগজে মোখলেছুর ও তার বাবার স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আটকে রাখেন। ডিপিএস জমা হলে তার রশিদ দেখিয়ে মোটরসাইকেলসহ স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে কাউকে কোনো অভিযোগ দিলে মেরে ফেলার হুমকিও দেন চেয়ারম্যান শওকত আলী।
আহত ব্যবসায়ী মোখলেছুরকে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান।
বাদী আহত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পাকা মেঝেতে ফেলে লোহার রড দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে আমার পা ও কাঁধের হাড় ফেটে যায়। তাদের হাতে পায়ে ধরেও রক্ষা হয়নি। উল্টো সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন চেয়ারম্যান। শরীরে রক্ত ঝরছে চিকিৎসক ডাকতে অনুরোধ করেছি, সেটাও তারা শুনেনি। আমাকে এক গ্লাস পানিও তারা পান করতে দেয়নি। আমি মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি। এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।
অভিযুক্ত মামাশ্বশুর প্রবাসী আব্দুস সাত্তার বলেন, স্ত্রীর নামে দেড় লাখ টাকার ডিপিএস করলে মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়া হবে। তবে মোখলেছুরকে বৈঠকে কে বা কারা মারধর করেছে রাতের আঁধারে আমি দেখিনি।
অভিযুক্ত পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতন করায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রতিশোধ স্বরূপ মোখলেছুরকে একটু মারধর করেছে। বিয়ে বিচ্ছেদ ঠেকাতে স্ত্রীর নামে ডিপিএস করতে বলা হয়েছে। ডিপিএস করলেই স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলটি তারা নিতে পারবে। চেয়ারম্যান চাইলে মধ্যরাত নয়, যেকোন সময় নিজ বাড়িতে সালিশ বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এ রায় কোনো অপরাধ হয়নি বলেও বীরদর্পে স্বীকার করেন তিনি।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কবাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২১
আরএ