গাইবান্ধা: লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন ৯০ পেরোনো দিপজান বেগম। বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন ভারি একটা বস্তা।
বৃদ্ধার দিকে হঠাৎ চোখ পড়ল শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানের। এগিয়ে গেলেন তিনি। বস্তাটা এক হাতে আর অন্য হাতে দিপজানকে ধরে সামনে এগোতে থাকেন রিকশার খোঁজে। কিন্তু দিপজানের বাড়ি যাওয়ায় রাস্তা এতটাই খারাপ যে কোনো চালক যেতে রাজি হলেন না। বস্তাটা টেনে বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয় বৃদ্ধার পক্ষে। তাকে তো ছেড়েও দেয়া যায় না। অগত্যা জাকারিয়া হাঁটতেই থাকলেন। এক হাতে ১৬ কেজি ওজনের বস্তা আরেক হাতে বৃদ্ধাকে ধরে পাড়ি দিলেন এক কিলোমিটার পথ। অবশেষে দিপজানের বাড়ি পৌঁছলেন। তারপর একটা চমক অপেক্ষা করছিল জাকারিয়ার জন্যে।
হাত ছেড়ে বৃদ্ধাকে বস্তাটা বুঝিয়ে দিতেই দিপজান তার খুতি (টাকা রাখার থলে) থেকে ২০ টাকা বের করে শুভসংঘ পরিচালকের হাতে ধরিয়ে দেন। মাথায় হাত বুলিয়ে কানে মুখ নিয়ে বললেন, 'বাবা ২০টা টেকা দেই, তুমি চা-বিস্কুট খাইয়ো। আমার বেটাপুত্র নাই। তুমি অনেক কষ্ট করে আমাকে এতদূর নিয়া আইছো। তোমার জন্য দোয়া করি বাবা। আল্লায় তোমাগো শান্তিতে রাখুক। '
করোনায় লেখাপড়া স্থবির হয়ে পরেছে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিল্পী আক্তারের। বাবা আসতে না পারায় সে চলে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপের উপহারসামগ্রী নিতে। তার বস্তাও ভ্যান পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন শুভসংঘের এক সদস্য। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে শিল্পী। হাসিমুখে বলে, আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এটা বাসায় নিয়ে গেলে আম্মু খুশি হবে। আপনাদের জন্য দোয়া করবে।
শুধু দিপজান-শিল্পী নয়, এমন অসংখ্য অসহায়ের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন শুভসংঘের সদস্যরা। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় খাবারসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের দ্বারে দ্বারে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার কামারজানি এলাকায় ৩০০ অসহায় ও অতিদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। এসময় সকলের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয় ও করোনা সচেতনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।
সকালে সদর উপজেলার কামারজানী বণিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এসময় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনায় ও সহায়তায় শুভসংঘ প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলায় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। সামনেও আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমাদের শুভসংঘের স্বেচ্ছাসেবীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই কাজগুলো করছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।
এই ত্রাণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, কামারজানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির, প্রধান শিক্ষক মো. সবুজ মিয়া, কামারজানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আসাদ, শুভসংঘের গাইবান্ধা জেলার সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস লতাসহ অন্যান্যদের মধ্যে সামিউল ইসলাম, রওজাতুন্নাহার লাবণ্য, মিনহাজুর রহমান নয়ন, সারাফ সোহাইবা নিহা, উম্মে কুলছুম তালুকদার, দেবী সাহা, রেহানা আক্তার রিসাত, উম্মে সালমা বৃষ্টি, তানহা ও কামারজানী ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবী আসাদুজ্জামান, রায়হান, মমিন, সুমন, জাকির, রহমত, সানিন, জুয়েল, মোস্তফা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২১
আরএ