ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৫ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

বাসে দুই সিটের ভাড়ায় এক সিট, তবু যাত্রীদের গাদাগাদি

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২১
বাসে দুই সিটের ভাড়ায় এক সিট, তবু যাত্রীদের গাদাগাদি

সাভার (ঢাকা): ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ির পথে যাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে৷ সরকার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ‘লকডাউন’ শিথিল করলেও দিয়েছে কিছু বাধ্যবাধকতা।  

কিন্তু সেই বিধিনিষেধ যেন মানতে নারাজ যাত্রী ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

শিথিল ‘লকডাউনে’র প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে বিভিন্ন বাস ও বাস কাউন্টারে। তবে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি।

পরিবহন চলাচলে দুই সিটে এক যাত্রী নেওয়ার বিধি দেওয়া হলেও দুই সিটেই গাদাগাদি করে নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। তবে একেকজনকে গুণতে হচ্ছে দুই সিটেরই ভাড়াই।
এখানেই শেষ নয়, এত সব করার পরও যাত্রীদের সঙ্গে করা হচ্ছে প্রতারণা। এক বাসের কথা বলে তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্য লোকাল বাসে। এসব বাস আসতে দেরি হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাদাগাদি করে কাউন্টারে বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাত ১১টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন বাসে ও কাউন্টারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আরও দেখা গেছে, বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। সেই সুযোগে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি পালনের নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে দুই সিটের ভাড়া আদায় করছে বিভিন্ন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে শ্যামলী, নাবিল, ডিপজল ও গ্রামীণ ট্রাভেলসসহ প্রায় সব বাসেই একই অবস্থা।

কিন্তু প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দুই সিটেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এছাড়া কাউন্টারে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসে থাকতে হচ্ছে। আর বাস দেখলেই স্বাস্ব্যবিধির বারোটা বাজিয়ে দলবেধে যাত্রীরা উঠে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, নারীদের কাউন্টারের বাইরে সন্তানকে কোলে ঘুম পারিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে।

আশুলিয়ার বাইপাইল ত্রিমোড়ে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া শ্যামলী পরিবহনের একটি লোকাল বাসের ৪০টি সিটেই যাত্রী ওঠাতে দেখা গেছে। যদিও প্রতি সিটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৩০০ টাকা করে। যেখানে সাধারণ ভাড়া ৪০০-৬০০ টাকা। বাসটির সামনের সিটে বসেছিলেন মিল্লাত নামের এক যাত্রী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুই সিটের জন্য ২১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেছি। কিন্তু আমার পাশের সিট খালি থাকার কথা থাকলেও সেখানে যাত্রী বসানো হয়েছে। তার কাছ থেকেও দ্বিগুণ ভাড়াই নেওয়া হয়েছে। কাউন্টারের লোকজন স্বাস্থ্যবিধির নামে ভাড়াও ডাবল নিচ্ছে, আবার যাত্রীও নিচ্ছে। কিছুই করার নাই, ঈদে বাড়িতে তো যেতে হবে।

আকলিমা নামের আরেক যাত্রী শ্যামলী কাউন্টারেই বসেছিলেন বাসের অপেক্ষায়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে বাসের কথা বলছে রাত ৯টার দিকে। দুই ঘণ্টা পর বাস আসছে। তবে, সেটি আবার আসল শ্যামলী না। লোকাল গাড়ি। ভাড়া ঠিকই দুই সিটের ২৪০০ টাকা। যে বাসে যাওয়ার কথা এখন আরেকটা বাসে তুলে দিছে।

সেই লোকাল শ্যামলী পরিবহনের চালক খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি স্বাস্থ্যবিধির কথা সবই জানি। কিন্তু কাউন্টার থেকে যাত্রী বেশি বেশি তুলে দিছে। তাই বাধ্য হয়ে আমি নিয়ে যাচ্ছি। এখানে আমার কিছু করার নেই।

শ্যামলী কাউন্টার মাস্টার মো. হাসানকে যাত্রীদের এতো অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তায় যত গাড়ি চলতাছে সবাই তো ডাবল ভাড়াই নিতাছে। সব গাড়িতেই যাত্রী ডাবল নিতাছে। আজ রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি। গরুর ট্রাকের কারণে জাম বাজছে। এ জন্য গাড়ি আসতে লেট হচ্ছে। আর ভাড়াটা একটু বেশি, কারণ গাড়ি ভরে গেলে আর যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরতে পারে না৷ তাই সেই ভাড়াটাও পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে৷

বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্রাফিক বিভাগ) আব্দুল্লাহ হিল কাফীকে জানানো হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানা অনেক বাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সড়কে অনেক যানজট। কারণ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে ব্যস্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।