ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পড়ে গেছে দাম, গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বেপারীরা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
পড়ে গেছে দাম, গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বেপারীরা প্রত্যাশামতো দাম না পাওয়ায় গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অনেক বেপারী

ঢাকা: হঠাৎ করেই পড়ে গেছে ছোট ও মাঝারি গরুর দাম। বড় গরুর চাহিদাও নেই।

অনেক বেপারী গড়ে গরু প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসানে বিক্রি করেছেন। অনেক বেপারী গরু লোকসানে বিক্রি করার চেয়ে ট্রাক ভর্তি করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাব নগর) ব্লক ই-সেকশন ৩ এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ ওয়ার্ড নম্বর ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফুট সড়ক সংলগ্ন রাজধানী হাউজিং-স্বপ্নধারা হাউজিং ও বসিলা গার্ডেন অস্থায়ী গরুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অতি মুনাফার আশায় এবার ডুবেছেন বেপারীরা। ১৯ জুলাই বেলা ১২টা নাগাদ গরুর দাম ঠিকই ছিল। এই সময়ে যেসব বেপারী গরু বিক্রি করেছেন তারা গরু প্রতি গড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করেছেন। কিন্তু বেশি লাভের আশায় লোকসানে পড়েছেন অনেক বেপারী। এ কথা স্বীকারও করেছেন অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার বেপারী শরিফুল ইসলাম। ছয়দিন আগে ৩৫টি গরু হাটে তোলেন। ১৯ জুলাই পর্যস্ত প্রতিটা গরুর দাম ভালো ছিল। ২০ তারিখ থেকে হঠাৎ গরুর দাম কমতে শুরু করে। এর আগে ৮টি গরু গড়ে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করেছেন। মঙ্গলবার ৬টি গরু গড়ে ১০ হাজার টাকা লোকসানে বিক্রি করেছেন। বাকি গরুগুলো মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাট থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

শরিফুল বেপারী বলেন, ভাই লোভ করতে গিয়ে লোকসানে পড়েছি। গতকাল গরু ছেড়ে দিলে ভালো করতাম। এখন কেউ দামই বলে না। এবার মরে শ্যাষ ভাই। জমি বিক্রি করে বাকি পরিশোধ করা লাগবে। গৃহস্থের কাছে বাকি করে গরু হাটে তুলছি!

ইস্টার্ন হাউজিং গরু হাটে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন গরুর বেপারী রফিকুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে তিনি ২০টি গরু হাটে তুলেছিলেন। এর মধ্যে ১২টি গরু বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি রফিকুলের।

তিনি বলেন, হঠাৎ করেই গরু দাম কমে গেল! কিছুই বুঝলাম না, মানুষের হাতে টাকা নেই। ১ লাখ টাকার গরুর দাম বলে ৬০ হাজার। কোরবানির হাটে আর গরু তুলবো না। আমার প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লস। বাকি গরু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে তিনটি গরু বাজারে তুলেছেন আলমগীর বেপারী। হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। আলমগীর বলেন, গতকাল যে দাম বলেছে সেই দাম আজকে (মঙ্গলবার) চাই। তবুও কেউ নেয় না।

হাটে বড় গরুর চাহিদা একেবারেই কম। গাবতলী পশুর হাটে বড় গরু তুলেছেন টাঙ্গাইলের কবির বেপারী। তিনি ছয়টি বড় গরু হাটে তুলেছেন। এর মধ্যে একটি গরু লোকসানে বিক্রি করেছেন। বাকি গরুর ক্রেতা নেই বলে জানান তিনি।

আরেক বেপারী রহিম বলেন, গরুর ক্রেতা নেই। ৩ লাখ টাকার গরুর দাম বলে ১ লাখ ২০ হাজার। সবাই বলে বাজেট নেই। ক্রেতার দাম শুনে ইচ্ছে করে গরুর দড়ি নিজের গলায় দিয়ে ঝুলি!

গরুর দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতারাও খুশি। তিন দিন ঘুরে গাবতলী পশুর হাটে ৩ মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন গরু ৬৫ হাজার টাকায় কিনে বাড়ি ফিরছেন শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আজকে গরুর দাম কম। কয়েক দিন বেপারীরা গরু ধরে রেখেছিল। আজকে ছাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।