বরিশাল: আর্থিক সংকট ও ব্যয় পুষিয়ে না ওঠার শঙ্কায় বরিশালের বাজারে চামড়া সংগ্রহ নিয়ে তেমন একটা তোড়জোড় নেই ব্যবসায়ীদের মাঝে। তারপরও যে চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে তা হয় হ্যাচকা দামে নয়তো বাকিতে কিনছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এবারে বাজারে চামড়া নিয়ে আসা সরবরাহকারীদের মধ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, দর না থাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করেনি, তবে মাদরাসাসহ বিভিন্ন এতিমখানা থেকে চামড়া নিয়ে আসছেন পাইকারদের কাছে।
আর মাদরাসা কর্তৃপক্ষের হয়ে বাজারে চামড়া নিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলছেন, দর না থাকায় তারাও তেমন একটা চামড়া ক্রয় করেননি। বেশিরভাগ চামড়াই এলাকাভিত্তিকভাবে বিনামূল্যে সংগ্রহ করছেন। তবে সেসব চামড়া সংগ্রহ করে বাজার পর্যন্ত আনতে যানবাহনের যে ব্যয় হচ্ছে তাও এখন দিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
যদিও বিকেলের দিকে আসা কিছু চামড়া সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ টাকা পেয়েছেন। তারা জানান, যাও পেয়েছি তা রেট অনুযায়ী নয় হ্যাচকা দরে। তাও আবার খুবই হতাশাজনক। সব চামড়ার দরই আলোচনা করে ঠিক করে কিনছেন ব্যবসায়ীরা, এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত রেট পাওয়া যাচ্ছে না।
বরিশালের পদ্মাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মো. শামিম উল্লা বলেন, এবারে চামড়া সংগ্রহের কোনো ইচ্ছাই ছিলো না আমার। তাই কোরবানির দিন বিকেল পর্যন্ত বাসাতেই ছিলাম। বিকেলে কিছু লোক, যারা বিগত সময়ে বিশ্বাস করে চামড়া দিয়েছেন তাদের ফোনে আসতে বাধ্য হয়েছি। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ টাকা আটকে থাকায় এখন নিজের কাছে থাকা ও ধার করা সামান্য কিছু টাকা নিয়ে চামড়া কিনতে বসেছি। বলতে পারেন দীর্ঘদিনের অভ্যেসের কারণেই চামড়া কিনতে বসেছি।
সরকার নির্ধারিত রেটে যেমন কিনতে পারছেন না, তেমনি সবাইকে টাকাও দিতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশালে সর্বোচ্চ ১৮ ফুটের ওপরে চামড়া পাওয়া যায় না, আর তাও খুব কম। তবে সব চামড়ার দরই আলোচনা করে ঠিক করে কিনতে হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত রেটে কেনা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, যাও বা কিনছি তার মধ্যে কিছু বাকিতেও অর্থাৎ পরবর্তীতে টাকা দেওয়ার শর্তে কিনতে হচ্ছে, আবার যদি একটি চামড়ার দর ৪শ টাকা হয় সেখানেও ৫০ টাকা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কারণ পুঁজি স্বল্পতার কারণে চামড়া কেনার পাশাপাশি তা সরবরাহ করে লবণ দিয়ে রাখার ব্যয়ের বিষয়টিও হিসেব করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, একটি চামড়া যদি সাড়ে ৩শ টাকায় কেনা হয়, তাহলে সেটিকে লবণ দিয়ে প্রসেসিং করে রাখতে শ্রমিক খরচসহ আরো ৩শ টাকা। তারপর পরিবহন খরচ দিয়ে ট্যানারিতে পাঠিয়ে সে দর পাবো কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির বলেন, এক সময়ে বহু চামড়া ব্যবসায়ী বরিশালে থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা আটকে যাওয়ায় এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে পরায় এখন তা কমে এসেছে। অনেকে তো ব্যবসার ধরনও পাল্টে ফেলেছেন। এবার হিসেব কষলে মাত্র দু’জনে চামড়া সংগ্রহ করছি।
নিজের অবস্থান থেকে যদি বলি এবারে পরিচিতদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চামড়া সংগ্রহ করছি, সেখানে হয়তো বাকিতে আর নগদ মিলিয়ে নিজে সর্বোচ্চ ৬ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করতে পারি। ঈদের আগে যদি ট্যানারি মালিকরা পাওনা থেকে কিছু টাকাও দিতো তাহলে হয়তো আরো চামড়া সংগ্রহ করতে পারতাম।
এবারে মৌসমি ব্যবসায়ীদের থেকে মাদরাসার লোকজনই চামড়া নিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২১
এমএস/আরএ