ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

‘বস কইছে, কারখানায় না এলে চাকরি থাকবে না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
‘বস কইছে, কারখানায় না এলে চাকরি থাকবে না’ আমিনবাজার ব্রিজের উপর ঢাকামুখী মানুষের ঢল | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলীতে যেন ঈদের আগ মুহূর্তের চিত্র। হাজারো মানুষের ঢল।

পায়ে হেঁটে, রিকশা-ভ্যান-ট্রাকে করে ঢাকায় প্রবেশ করছেন হাজার হাজার মানুষ। এই মানুষেরা মূলত পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার শ্রমিক।

করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা চালুর ঘোষণা দেওয়ায় ঢাকার দিকে মানুষের এই ঢল। গণপরিবহন বন্ধ বলে হাজারো ভোগান্তি আর অর্থ খরচ করে তারা আসছেন কর্মস্থলে যোগ দিতে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের ফোন করে বলা হয়েছে, কারখানায় না এলে চাকরি থাকবে না। তাই তারা হাজারো কষ্ট সহ্য করে যে কোনো উপায়ে ঢাকায় ফিরছেন।

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ঢাকায় অবস্থান করা শ্রমিকদের দিয়েই কারখানা চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কারখানার মালিকপক্ষ প্রত্যেক শ্রমিককেই কর্মস্থলে যোগ দিতে ফোন করেছে।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। দীর্ঘ গাড়ির জট আমিনবাজার ব্রিজে। ব্রিজের ওপাড়ে নামিয়ে দেওয়ায় পোশাক শ্রমিকেরা পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করছেন।

একেক জন শ্রমিকের ঢাকায় ফেরা মানে দুর্ভোগের নতুন নতুন চিত্র। শুধু ঢাকায় প্রবেশই না, রাজধানী থেকে সাভারের দিকেও যাচ্ছে লোকজন। পোশাককর্মীরা কয়েকগুণ ভাড়া দিয়ে দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। তারা বলছেন, কারখানা খুলে দেওয়ার আগে পরিবহন খুলে দেওয়া উচিত ছিল।

বেলা ২টার দিকে গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজে কথা হয় পোশাককর্মী শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হোসনে আরার সঙ্গে। হোসেনে আরার কোলে ৯ মাসের একটি শিশুও আছে। কারখানায় যোগ দিতে এই দম্পতি রাজশাহী থেকে এসেছে। প্রথমে রাজশাহী থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চন্দ্রা পর্যন্ত এসেছে। প্রত্যেক জনের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাড়া পড়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। এরপর আবারও ব্যক্তিগত গাড়ি। সেখানেও জন প্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া খরচ হয়েছে। এরপর রিকশা ও পায়ে হেঁটে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত। আমিনবাজার ব্রিজ থেকে গাবতলীতে এসেছেন পায়ে হেঁটে।

ঢাকায় প্রবেশ করে নতুন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ওই দম্পতিকে। কারণ, সেখানেও কোনো পরিবহন নেই। যাতায়াতের মাধ্যম বলতে রিকশা। গাবতলী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রিকশা চালকেরা ভাড়া হাঁকছেন ৩০০ টাকা। শফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটা মশারির কারখানায় কাজ করেন। গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছাতে জন প্রতি আরও অন্তত হাজার টাকার বেশি খরচ হবে। ৫০০ টাকার পরিবর্তে তাদের জন প্রতি পরিবহন খবর পড়ছে ৪ হাজার টাকার বেশি।

বাংলানিউজকে শফিকুল বলেন, গতকাল হঠাৎ অফিস থেকে ফোন। বস কইছে, কারখানায় না আসলে চাকরি যাবে। সময়মতো অফিসে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। আমার জীবনে এমন দুর্ভোগে কখনও পড়ি নাই। কারখানা চালুর আগে পরিবহন চালু করা উচিত ছিল।

রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছেন দুই ভাই পলাশ ও আশিক। প্রথমে তারা ট্রাকে চড়ে সাভারের জিরানিবাজার পর্যন্ত এসেছেন। প্রত্যেকের ভাড়া লেগেছে ৮০০ টাকা। পথে বৃষ্টি হওয়ায় কয়েকবার ভিজেছেন দুই ভাই। এরপর মোটরসাইকেলে চড়ে আমিনবাজার এসেছেন। মিরপুর সেনপাড়ার এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন পলাশ ও আশিক।

বাংলানিউজকে পলাশ বলেন, ফোন করে বলা হয়েছে কাল অফিস খোলা। টিভিতে নিউজ দেখছি আমাদের গার্মেন্টস খোলা। তাই আমরা চলে এসেছি। বাসা থেকে বের হয়েছি ভোর ৬টার দিকে। ট্রাকে করে এসেছি। ট্রাকে ভাড়া নিয়েছে ৮০০ টাকা করে। এরপর জিরানিবাজারে মোটরসাইকেলে ৪০০ টাকা দিয়ে ঢাকায় আসছি। এখন মিরপুর ১৩ নম্বর যাবো। পায়ে হেঁটে গেলে দেড় ঘণ্টা লাগবে।

গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসেছেন শাখাওয়াত হোসেন। নগরীর মেট্রো গার্মেন্টেসে সুইং সুপার ভাইজার হিসেবে কর্মরত তিনি। হঠাৎ ফোন পেয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। পায়ে হাঁটা থেকে শুরু করে ট্রাক, রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে চড়ে দুর্ভোগ ঢেলে ঢাকায় এসেছেন শাখাওয়াত।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কালকে হঠাৎ ফোন দ্রুত অফিস আসবা। অফিসে অনুপস্থিত হলে চাকরি থাকবে না। আমরা গরিব মানুষ চাকরির ভয়ে ঢাকায় চলে এসেছি। অফিসের অর্ডার চাকরি বাঁচাতে হলে আসতে হবে। তবে আমাদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। জানের ওপর এত কষ্ট হতো না। ঢাকায় এসে রিকশা খুঁজছি পল্লবী যাওয়ার জন্য। গাবতলী থেকে পল্লবী যেতে ৬০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে রিকশাচালকরা। ৩০০ টাকা বললেও কেউ রাজি হচ্ছে না।

আমিনবাজার ব্রিজের উপরে চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভোর থেকেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগ পোশাককর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।