রাজশাহী: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাজশাহীর গোদাগাড়ী জোনের অফিসকক্ষে ২০১৬ সালে আগুন লাগে। এতে অফিসের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়।
একে একে বেরিয়ে আসে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলতে আগুন লাগান বিএমডিএর চার কর্মকর্তা। তদন্ত শেষে চার কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে কমিটি রিপোর্ট জমা দিলেও বোর্ড সভার নামে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া এখনও ঝুলে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোনের অফিসকক্ষে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর আগুন লাগে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চার বছর ধরে চেক জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসে। ২০১২ সালের ৩০ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এই জালিয়াতি ধামাচাপা দিতেই আগুন দেন বিএমডিএর চার কর্মকর্তা।
তদন্তে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জিএফএম হাসানুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন, সহকারী কোষাধ্যক্ষ খবিরুদ্দিন, সহকারী হিসাব রক্ষক মতিউর রহমানের। তিন দফা তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই তাদের অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনার পর ক্যাশ শাখার দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তারা চার বছর ধরে বরখাস্ত আছেন। তবে বহাল তবিয়তে স্বপদে বহাল আছেন দুই সহকারী প্রকৌশলী।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩০ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন খাতের ১৬৯টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ টাকা আত্মসাত করা হয়। অপারেটরের ২৭টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ টাকা, কৃষকের নষ্ট কার্ডের ১৩টি চেকে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৮০ টাকা ও বকেয়া বেতনের ৩টি চেক জালিয়াতি করে করে ৫২ হাজার ৬০ টাকা আত্মসাত করা হয়।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএমডিএর দুই দফা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিকতর তদন্তে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগুন দেওয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় মামলার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া আত্মসাত করা টাকাও ফেরত নিতে বলা হয়। কিন্তু সেপথে হাঁটেনি কর্তৃপক্ষ। বোর্ড সভার নামে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শামসুল হোদা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।
বিএমডিএর অডিট অফিসার ও তদন্ত কর্মকর্তা বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত বাংলানিউজকে বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে অফিসে আগুন লাগানো হয়। ওই সময় সহকারী কোষাধ্যক্ষ খবিরুদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন।
এদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জিএফএম হাসানুল ইসলাম বলেন, এর সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নয়। শত্রুতাবশত আমাকে জড়ানো হয়েছে।
সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে আমার বক্তব্য জানিয়েছি। এ ঘটনায় আমার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই বলে আমি মনে করি।
বরখাস্ত হওয়া সহকারী কোষাধ্যক্ষ খবিরুদ্দিন, আমি সরকারি কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম কিন্তু চেকে আমার কোনো স্বাক্ষর নেই বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট নেই। এর সঙ্গে আমি জড়িত নয়।
জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, বিষয়টি বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। বোর্ড মিটিংয়ে এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর মিটিং হবে। তারপর তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২১
এসএস/এএটি