ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় সহযোগিতা করেন না জনপ্রতিনিধিরা

সুমন রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২১
স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় সহযোগিতা করেন না জনপ্রতিনিধিরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অসহায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পেলেও স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় সরকারি সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওই উপকারভোগীরা। তবে এসব কিছুর জন্য উপকারভোগীরা দায়ী করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১ম পর্যায়ে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ১৭৪টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ১৩০টি ঘর ভূমিহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সরেজমিন সদর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, উপকারভোগীরা যার যার কাজে ব্যস্ত। কেউ রান্না করছেন, আবার কেউ কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এসময় একাধিক নারী উপকারভোগী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটারদের চাল, ডাল ও নগদ টাকা দিয়েছে কিন্তু তারা এখানকার ভোটার না হওয়ায় তাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। এ কারণে খুব কষ্টে ঈদ পার করতে হয়েছে তাদের।

কথা হয় ফিরোজা বেওয়া (৬৬) নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, দুই মেয়ে রেখে ৩০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। বসবাস করতেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের চর পৌলি গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে। অন্যের বাড়িতে আয়ার কাজ করে চলতো তার সংসার। সেই কাজ করেই দুই মেয়েকে বড় করে বিয়েও দিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে যমুনার ভাঙনে সেই বাড়িটিও বিলীন হয়ে যায়। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চলে তার একাকি সংসার। চলতি বছর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চিলাবাড়ী গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। কিন্তু আয় রোজগার না থাকায় অভাব অনটনের কারণে তার খুব কষ্টে চলতে হয়। শুধু ফিরোজা বেওয়া নয়, তার মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পের শত শত মানুষ স্থানীয় এলাকার ভোটার না হওয়ায় সব রকম সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে তাদের অনেক কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।

ফিরোজা নামে আরেক নারী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় পাকা দালাল পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতা এখনো পাননি। বয়স হওয়ায় পরের বাড়িতে কাজও করতে পারেন না। আশপাশের লোকজন খাবার দিলে খান না দিলে অনাহারে থাকেন। গেল দুই ঈদে সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাননি তিনি। এলাকার ভোটার না হওয়ায় মেম্বার, চেয়ারম্যানরা সহযোগিতা করেন না।

অসুস্থ সেলিনা বেগম জানান, স্বামী ছেড়ে গেছে কয়েক বছর আগে। ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে ছেলেকে কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে অসুস্থতার কারণে কাজও করতে পারছেন না। কয়েক মাস আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন তিনি। ঈদে কেউ তার বা তাদের খোঁজ খবরও নেয়নি কেউ।

দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া লাবু জানান, সরকারি চাল ও নগদ টাকা কমিটির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে কেউ পায় কেউ পায় না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেকেই তো অন্য ইউনিয়নের। তাদের মধ্যেও অনেকেই পেয়েছেন।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বাংলানিউজকে জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমিসহ ঘর প্রাপ্তরা ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তারা ভোটার না হওয়ায় সরকারি সহযোগিতা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে তাদের সবাইকে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় ভোটার করে নেওয়ার জন্য ইউএনওদের বলা হয়েছে। নির্বাচন অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিগগিরই তাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের উপেক্ষা করতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।