ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামী-বাবা-মা হারিয়ে নির্বাক কাঁচোন বিবি, চুলা জ্বলেনি ২ বাড়িতে 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
স্বামী-বাবা-মা হারিয়ে নির্বাক কাঁচোন বিবি, চুলা জ্বলেনি ২ বাড়িতে 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: কথা ছিলো বুধবার (০৪ আগস্ট) ছোট সন্তানকে ধুমধাম করে বরণ করবেন। তাই স্বামী শরিফুল ইসলামকে ছেলে ও ছেলের নববিবাহিত স্ত্রী সুমি আক্তারকে আনতে পাঠিয়েছিলেন।

সঙ্গে ছিলেন আদরের একমাত্র মেয়ে ও জামাই, বাবা-মা, ভাই-ভাবিসহ ১৪ জন নিকট আত্মীয়। কিন্তু সেই আনন্দ শোকে পরিণত হয়ে সব আনন্দ কেড়ে নিবে এমনটা জানতেন না কাঁচোন বিবি।

কাঁচোন বিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ন গ্রামের মৃত শরিফুল ইসলামের স্ত্রী। বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) সকালে গিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিস্তব্ধ বাড়ির পরিবেশ। তবে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিদের ছিল আনাগোনা।  

নববিবাহিত সুমি শাশুড়ির খাটের পাশে বসে বাতাস করছেন। শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর সদ্য বিবাহিত আল মামুন নীবর দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন বাবার কবরের দিকে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার আল মামুনের বাড়ি ও তার নানার বাড়িতে জ্বলেনি কোনো চুলা। একসঙ্গে তাদের নিকট আত্মীয়সহ ১৪ জন মারা যাওয়ায় মরদেহ দাফন থেকে শুরু করে খাবারের ব্যবস্থা সবই স্থানীয় প্রতিবেশীরা করেছেন। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসছেন। বুধবার রাতে শরিফুল ইসলামের কবর দেওয়া হয় তারই বাড়ির পাশে এবং শরিফুলের শ্বশুর বাড়ির সাতজনকে কবর দেওয়া হয় বাড়ির সামনে।

সদ্য বিবাহিত বর আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিয়ে করতে গিয়ে বাবা একমাত্র ভগ্নিপতি, নানা-নানী, মামা-মামিসহ একসাথে ১৪ জনকে হারাবো কখনো কল্পনাও করিনি। ’

স্থানীয় গ্রামবাসী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এমনিতেই পরিবার  
দুইটি শ্রমবিক্রি করে সংসার চালাতেন। তার ওপর পরিবার দুইটির কর্মক্ষম ব্যক্তিরা মারা যাওয়ায় পরিবারগুলো বিপদে পড়েছে। বিশেষ করে বরের মামা সাদিকুল ও মামি ল্যাচন বেগম মারা যাওয়ায় তাদের ৩ কন্যা সন্তান এতিম হয়ে গেছে। ছোট শিশুটি ৮ বছর, মেজটি ১২ বছর এবং বড়টির বয়স ১৫ বছর হওয়ায় তাদের দেখভাল করার কেউ থাকলো না।

এদিকে নারায়নপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আজিম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বুধবারের বজ্রপাতে দুইটি পরিবার একেবারে পথে বসে গেল। এজন্য তাদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মৃতের জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সাদিকুলের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুঞ্জুরুল হাফিজ বাংলানিউজকে জানান, নিহতের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের পাঁচ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আহতরা সবাই বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।  

এরআগে, বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মানদীর তেলিখাড়ি ঘাটে বজ্রপাত হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্য নারায়নপুর গ্রামের ১৪ জন, একই উপজেলার চরবাগডাঙ্গার একজন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দুইজন বজ্রপাতে মারা যান। মৃতরা সবাই জনতারহাট থেকে নৌকায় বরযাত্রী নিয়ে বৌভাতে কনের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঁকা ইসমাঈল মাস্টরের পাড়ায় যাচ্ছিলেন।

>>>কনে আনতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।