ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘কবর বাঁধাইয়ের আগ পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় ছিলাম’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২১
‘কবর বাঁধাইয়ের আগ পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় ছিলাম’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: `আমি শ্বশুর বাড়িতেই ছিলাম, বাড়ির লোকজন আমাদের নিতে আসায় বেশ খুশিতেই ছিলাম। হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে মনটা আনচান করলো।

এরপর খবর এলো বরযাত্রীর নৌকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ছুটে যাই তেলিখাঁড়ির ঘাটে। এসে দেখি আব্বুসহ ১৭ জন আর বেঁচে নেই। ’

কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সদ্য বিবাহিত সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের আল মামুন।  

তিনি বলেন, ‘ বজ্রপাতে আমার নিকট আত্মীয়সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাবাকে দাফন করা হয়েছে বাড়ির পেছনের দরজার পাশে। আর নানা-নানীসহ একই পরিবারের ৬ জনকে দাফন করা হয়েছে ওই বাড়ির সামনের প্রধান দরজার পাশে। বুধবার (০৪ আগস্ট) রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মরদেহগুলো দাফনের পর সংসারের চিন্তা বাদ দিয়ে কবরগুলো পাহারা দিতে হয়েছে। স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে সারাদিন চলেছে কবরের ওপরে রড সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই দেওয়ার কাজ। সন্ধ্যায় কাজ শেষ স্বস্তি ফেরে। অন্য যে মরদেহগুলো দাফন করা হয়েছে, কবরগুলো বাঁধাই কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন সবাই। ’

স্থানীয়রা জানান, বজ্রপাতে নিহত তোবজুল হক, তার স্ত্রী জামিলা বেগম, তোফজুলের ছেলে সাদিকুল ইসলাম, পুত্রবধূ ল্যাচন, অপর ছেলের বৌ টকিয়ারা, নাতি বাবলুকে বুধবার (৪ আগস্ট) রাতেই বাড়ির সামনে দাফন করা হয়। মৃতদের দাফন-কাফনে সাহায্য করার মতো কেউ না থাকায় গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে দাফন কাজ শেষ করে। এরপর বৃহস্পতিবার কবরগুলো বাঁধাই শেষে ঢালাই দিয়ে মরদেহগুলো সুরক্ষিত করা হয়।

মরদেহের সুরক্ষার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় প্রতিবেশী আনারুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে মরদেহ কবর থেকে চুরি হয়ে যায়। তাই এলাকাবাসী অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। বড়, ছোট, বৃদ্ধ সবাই কবরগুলো বাঁধাতে সহায়তা করেছে। ’

জানা যায়, বজ্র্রপাতে নিহত ১৬ জনের মধ্যে একই বাড়ির ৬ জন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ৮ শিশু। এদের মধ্যে ৪ শিশুই মা-বাবা হারিয়ে এতিম হয়েছে।

এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মৃতদের প্রতি পরিবার পাচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। এতিম ৪ শিশুর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঘোষণা করেছে ৫০ হাজার টাকা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি নুরুল ইসলাম বুলবুল জনপ্রতি দিয়েছেন ২৫ হাজার  টাকা।

অপরদিকে, শিবগঞ্জের পাঁকায় নিহতদের পরিবারকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকারি অনুদানের বাইরে নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন।

বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের সূর্য নারায়নপুর গ্রামের ১৪ জন, একই উপজেলার চরবাগডাঙ্গার একজন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দুইজন মারা যান। মৃতরা সবাই বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে কনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

>>>কনে আনতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু
>>>স্বামী-বাবা-মা হারিয়ে নির্বাক কাঁচোন বিবি, চুলা জ্বলেনি ২ বাড়িতে 

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২১ 
জেএ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।