ঢাকা: ‘স্বপ্ন’ সুপার শপের ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার আত্মসাৎ করেন হ্যাকার চক্রের সদস্যরা।
এরপর ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ছাড়ে কয়েকটি ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের কাছে তা বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেন চক্রের মূলহোতা মো. নাসিমুল ইসলাম।
এ কাজে নাসিরুলকে সহযোগিতা করেন তার দুই সহযোগী রেহানুর হাসান রাশেদ ও রাইসুল ইসলাম।
সম্প্রতি ডিজিটাল ভাউচার তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শনিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে একটি হ্যাকার গ্রুপের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
রোববার (৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, হ্যাকার চক্রের মূলহোতা নাসিরুল ও তার দুই সহযোগী রেহানুর হাসান রাশেদ ও রাইসুল ইসলাম গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হ্যাকিং কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ ও একটি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক কার্ড ও স্বপ্ন ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সুপার শপ স্বপ্ন তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮৬টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। স্বপ্ন’র ডিজিটাল সিস্টেমটি তাই অ্যাডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল। গত ২৬ জুন থেকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে সুপার শপ স্বপ্নর শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্রিচ করে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি স্বপ্ন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তারা ডিএমপির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কাছে অভিযোগ করে।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সাইবার ইনভেস্টিগেটরদের একটি টিম। স্বপ্ন সুপার শপের ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স অ্যানালাইসিসসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, স্বপ্নর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তারা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ছাড়ে কয়েকটি ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেন। জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে চক্রটি। এ অর্থ তারা বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টে জমা করেন।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইসে প্রায় ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, এছাড়াও এ হ্যাকার গ্রুপটি প্রথম সারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, দেশের প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সার্ভার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলেও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এমনকি এই হ্যাকারদের কাছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগ ইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করেন, যা ডিজিটাল ভাউচার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও তারা ফ্রিল্যান্সারডটকম নামের বিদেশি একটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ বিটকয়েন হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে করা হবে। গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, চক্রের মূলহোতা নাসিমুল বগুড়া পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পাস করে হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস