টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল শহরের প্রধান কাঁচাবাজার ‘পার্ক বাজার’। এই বাজারে যাওয়ার রাস্তাটির অবস্থা এতোই খারাপ যে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়ে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিষয়টি বাজার কমিটি, জনপ্রতিনিধি, পৌর মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে কয়েক বছর ধরে ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছে বাজারে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে শহরের ছয়আনি বাজারের উন্নয়ন কাজের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের ভাসানী হলের পাশে টাঙ্গাইল পার্কের তিন একর জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসানো হয়। এরপর ছয়আনি বাজারের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে সেখানে পুনরায় বাজার চালু হয়। কিন্তু পার্কে অস্থায়ীভাবে আসা ব্যবসায়ীরা আর সরে যায়নি। সে থেকে বাজারটি পার্ক বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরে পৌরসভা পার্ক বাজারের ইজারা দেওয়া শুরু করে।
১৯৮৯ সালে বাজারটি স্থায়ী বাজার হিসেবে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পায়। বর্তমানে পার্ক বাজারে প্রায় সাত শতাধিক স্থায়ী দোকান এবং আরও ৩০০ অস্থায়ী দোকান রয়েছে। এত বড় এ বাজারটিতে আজও নির্মাণ হয়নি কোনো স্থায়ী শেড। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদা জমে ক্রেতা সাধারণের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সবসময় কাদায় ভরে থাকে পুরো বাজার। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদার কারণে বাজারের অনেক পাশেই প্রবেশ করা যায় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্ক বাজারের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় পানি জমে রয়েছে। পাকা রাস্তার উপরের সলিং উঠে গিয়ে চার জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাদার কারণে পায়ে হাঁটা যায় না। অপরদিকে বড় বড় গর্ত থাকায় এই সড়কে কোনো রিকশাও চলতে চায় না। দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে বাজারের ভেতরে যাওয়া কষ্টসাধ্য। এছাড়াও বাজারের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমের রাস্তাগুলোর অবস্থাও বেহাল।
বাজারে আসা ক্রেতা আবুল হাসেম বলেন, গত এক মাস ধরে খুব কষ্ট করে বাজার করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হওয়ায় গত চার দিন ধরে ভোগান্তি আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। রাস্তায় কাদা থাকায় বাজারে এলেই পরনের কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাগুলোর সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সুজন মিয়া বলেন, এই বাজারে আসলে গাড়ির কোনো না কোনো সমস্যা হবেই। কখনও স্প্রিং ভেঙে যায় আবার কখনও রাস্তায় অটো উল্টে যায়। আমার বয়সে অনেক রাস্তায় গাড়ি চালাইছি কিন্তু পৌর এলাকায় এতো নিম্নমানের রাস্তা কখনও দেখি নাই। পেটের দায়ে এই বাজারে টিপের জন্য আসি। নয় আসতাম না। দুর্ভোগের আরেক নাম শহরের পার্ক বাজারের রাস্তা।
করটিয়া থেকে বাজারে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আতাউল মাহমুদ বলেন, এতো বড় কাঁচাবাজারের রাস্তা এতো নিম্নমানের তা বাজারে না আসলে বোঝা যেতো না। বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের খুবই দুর্ভোগের মধ্যে বাজার করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের আড়তদার আবু হানিফ বলেন, কাদার কারণে আমাদের দক্ষিণ পাশে কোনো ব্যবসায়ী আসতে চায় না। শুধুমাত্র বাকিতে নেওয়া কাস্টমাররা আসে। আমাদের বিক্রি একেবারে কমে গেছে। বিক্রি কম হওয়ায় আয়ও কমে গেছে। রাস্তাগুলো সংস্কার করা খুব জরুরি।
পার্ক বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোয়াহের আলী বলেন, এই বাজারে এক হাজারের বেশি ব্যবসায়ী রয়েছে। জেলার বাইরে থেকে শত শত ব্যবসায়ী এই বাজারে আসে। অপরদিকে বাজারের পাশে র্যাব অফিস ও খাদ্য গুদাম। এতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তা সংস্কারের জন্য মেয়র, ডিসিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কই গেলে এই বাজারের রাস্তাগুলো সংস্কার হবে তাও জানি না। দুর্ভোগই আমাদের ব্যবসায়ীদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সাবেক মেয়রের সময় বাজারের রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। কাজ শুরু না করায় আমরা নতুনভাবে কাজটি শুরু করার পরিকল্পনাও করেছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলরের অকাল মৃত্যুতে তা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে রাস্তা সংস্কারের উদ্বোধন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
আরএ