ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজধানীর প্রাতঃভ্রমণকারীদের সবচেয়ে পুরোনো এবং সুবিধাজনক স্থান রমনা পার্ক। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় প্রায় সব কিছু খুলে দেওয়া হলেও বুধবারও বন্ধ রয়েছে রমনা পার্ক।
অনেকে ধারণা করেছিলেন বুধবার ১১ আগস্ট থেকে রমনা পার্কও হয়তো খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রাতঃভ্রমণ করতে এসে পার্কের গেট বন্ধ দেখে হতাশ হয়ে তারা ফিরে গেছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রমনার গেটে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। সড়কের পাশে ও ফুটপাথে অনেক মানুষকে হাঁটতে দেখা যায়। আবার দলবেঁধে অনেকে ফুটপাথ ও গাড়ির রাখার জায়গায় জগিং করছিলেন।
বুধবার থেকে সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন, দূরপাল্লার পরিবহন, লঞ্চ, ট্রেন সব চলাচল শুরু হয়েছে। শপিংমলসহ সব ধরনের মার্কেটও খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজধানীবাসীর প্রাতঃভ্রমণ ও অবসর কাটানোর বড় জায়গা রমনা পার্ক এখনো খোলেনি। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী ও দর্শনার্থীরা। তাদের বক্তব্য সবই যখন খুলে দেওয়া হয়েছে, পার্ক কেন বন্ধ থাকবে?
পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা এখনো আসেনি। দু’একদিনের মধ্যে হয়তো খুলে দেওয়া হবে। বুধবার থেকে বিধিনিষেধ শিথিল হলেও পার্ক খোলেনি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলতে পারবো না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওই সময় রমনা পার্ক এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাউকে পাওয়া যায়নি।
রমনা পার্কের আয়তন প্রায় ৬৮ দশমিক ৫ একর। স্বাভাবিক সময়ে দিনভর প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকে পার্কটি। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সেদিন থেকেই পার্ক বন্ধ ছিল। ওই বছর ৩১ মে সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়া হলেও পার্কটি বন্ধ থাকে। পরে জনসাধারণের হাঁটার জন্য রমনা পার্ক খুলে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ৮ সেপ্টেম্বর-২০২০ হাইকোর্টে একটি রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। এর কয়েক দিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর পার্কটি খুলে দেওয়া হয়। এবছর ১জুলাই থেকে পুনরায় সরকারি বিধিনিষেধের কারণে পার্কটি আবার বন্ধ রাখা হয়েছে।
যারা পার্কে নিয়মিত আসেন তারা বলেন, রমনা পার্কে যারা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ করতেন, তারা এখনো পার্কের সামনে আসছেন। ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে পার্কের বাইরে, হেয়ার রোড, বেইলি রোডসহ অন্য সড়কের ফুটপাথে হাঁটছেন। অনেকে সড়কের পাশেই ব্যায়াম করছেন। অনেক নারীরাও সকালে এই পার্কে প্রাতঃভ্রমণ ও ব্যায়াম করেন। তারা পার্ক বন্ধ থাকার কারণে হাঁটতে পারছেন না। কিংবা পুরুষের সঙ্গে ফুটপাথে ব্যায়াম করতে পারছেন না।
তারা আরও বলেন, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হয়। ঘরে বসে থেকে এই মানুষগুলো আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। করোনার কথা বলে পার্ক বন্ধ রাখা একদম খোঁড়া যুক্তি। পার্কের চেয়ে বেশি ভিড় হয় হাটবাজার, যানবাহনে। আর রমনা তো অক্সিজেন ফ্যাক্টরি, নিরাপদ দূরত্বে হাঁটার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তারপরও সরকার বিধিনিষেধ জারি করলেই পার্কটিও বন্ধ রাখা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
এমএইচ/এসআইএস