চুয়াডাঙ্গা: ঘরে বাজার না থাকায় মাত্র ২০০ টাকা চাওয়ায় বাবা-মাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেছে মাদকাসক্ত ছেলে সোহেল। এ ঘটনার পর সোহেল ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী ও পুলিশের সহযোগিতায় ঘরের দেয়ালের একাংশ ভেঙে তাকে উদ্ধার করে।
বুধবার (১১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের বকচরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সোহেলের বাবা আশরাফুল ইসলাম ও মা শাবানা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলগাছি গ্রামের বকচরপাড়ায় আশরাফুল ইসলামের ছোট ছেলে সোহেল (২৫) দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে সোহেল কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে তার মা শাবানা খাতুন বাজার বাবদ ২০০ টাকা চাই ছেলের কাছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে সোহেল। একপর্যায়ে সোহেল কোদাল দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে এবং হাসুয়া দিয়ে মাথায় কুপিয়ে জখম করে। এ সময় সোহেলের বাবা আশরাফুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তাকেও হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে আশরাফুল ও তার স্ত্রী শাবানা খাতুন নিজেদের বাঁচাতে বাড়ির বাইরে বের হয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসে। পরে সোহেল নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরের আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন ঘরের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও এলাবাসীর সহযোগিতায় ওই কক্ষের দেয়ালের একাংশের ইট সরিয়ে ঢুকে সোহেলকে উদ্ধার করে। এতে অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পান সোহেল।
খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে সোহেলকে আটক করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেওয়া হয়। রাতেই সোহেলের বাবা-মা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সোহেলের মা শাবানা খাতুন বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। সোহেল সবার ছোট। গত তিন বছর আগে বিয়ে দিলেও নেশাগ্রস্ত হওয়ায় সোহেলকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান তার স্ত্রী। কোন রকম সংসার চলে আমাদের। রাজমিস্ত্রীর কাজ শেষে ছেলে রাতে বাড়ি ফেরার পর বাজারের জন্য ২০০ টাকা চেয়েছিলাম। টাকা তো দিলোই না বরং আমাকে আর আমার স্বামীকে কুপিয়ে জখম করেছে। আমরা তার অত্যাচারে অতিষ্ট।
সোহেলের বাবা আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সোহেল দীর্ঘদিন ধরে নেশা করে। আমরা নিষেধ করলে আমাদের উপর অমানবিক অত্যাচার করে। আমরা আর সহ্য করতে পারছিনা। এর আগে, পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে মায়ার টানে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এবার আমরা আর ছাড়াবো না। সামান্য টাকা চাওয়ায় আমাদের কুপিয়ে জখম করেছে। এরকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকায় ভালো।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। এর আগে, মাদক সেবনের জন্য সোহেল জেল খেটেছে। আত্মহত্যা চেষ্টা ও মাদক সেবনের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২১
এনটি