ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

ঢাকা: বরেণ্য সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (১৩ আগস্ট)। ২০১৮ সালের এ দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রয়াত হন।

সাংবাদিকতার বাতিঘরখ্যাত গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুবার্ষিকীতে এবার সমকালসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না।

দৈনিক যুগান্তর ও সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের তিন দশকের বার্তা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। বাবা মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মা মরহুমা সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজীবন।

দেশের সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন।

গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে তার সাংবাদিকতা পেশার সূচনা। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন নিজ এলাকা বানারীপাড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক পূর্বাণীর নির্বাহী স্বাক্ষর রাখেন। সত্তর দশকের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পূর্বাণীতে তারই সম্পাদনায় এ দেশে ম্যাগাজিন আকারে বৃহদায়তনের ঈদসংখ্যা প্রকাশের রীতি শুরু হয়। তার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সাপ্তাহিক হিসেবে পূর্বাণী অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এসব কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি দেশের দু’টি দৈনিক ‘যুগান্তর’ ও ‘সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গোলাম সারওয়ার দৈনিক সমকালের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার, ষাটের দশকে অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। সত্তর দশকেও ছড়ায় সচল রেখেছিলেন নিজের কলম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে এক সময় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান আজও শ্রোতাহৃদয়ে শিহরণ জাগায়। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ছড়াগ্রন্থ ‘রঙিন বেলুন’, ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় পরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাকা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সাংবাদিকতায় জীবনব্যাপী অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষে সমকালের প্রধান প্রতিবেদক লোটন একরাম জানান, করোনার কারণে গোলাম সারওয়ারের এবারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান ও স্মরণসভা হচ্ছে না। তবে, বিকেল চারটায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সমকাল পরিবার।

এর পাশাপাশি গোলাম সারওয়ারের পরিবার তার স্মরণে জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়ায় এতিমদের মধ্যে তবারক বিতরণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
ডিএন/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।