ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেদে পল্লীতে রশিতে বাঁধা শিশুদের জীবন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
বেদে পল্লীতে রশিতে বাঁধা শিশুদের জীবন!

বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট ফেরিঘাট সংলগ্ন বেদে পল্লীর মানুষের  জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটে নদীতে ভাসমান অবস্থায়। এ কারণে বেদে পল্লীর ভাসমান নৌকাগুলোতে থাকা অনেক শিশুর কোমরেই রশি বাঁধার দৃশ্য দেখা যায়।

শিশুরা যেন পানিতে না পড়ে যায়। সেজন্যই তাদের কোমরে রশি বেঁধে রাখা হয়।

রিনা বেগম একজন বেদে। থাকেন উপজেলার লাহারহাট ফেরিঘাট সংলগ্ন বেদে পল্লীতে। নৌকার ওপর দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন তিনি। পাশেই খেলা করছিলো তার পাঁচ বছরের শিশু রিফাত। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখা যায় তার কোমরে বাঁধা রয়েছে মাঝারি আকারের রশি।

জানতে চাইলে রিনা জানান, বাচ্চা যেন নদীতে পড়ে না যায়, সে জন্যই তার কোমরে রশি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

বেদে পল্লীর বয়োজোষ্ঠ্য বাসিন্দা হাফেজ সরদার জানান, নদীতে ঘুরে ঘুরেই তাদের জীবন কাটে। নৌকাতে জন্ম, নৌকাতেই মৃত্যু। জন্মের পর শিশুরা নৌকাতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হয়।

তিনি বলেন, নদীতে ভাসমান জীবন ধারণ করতে হলে সাঁতার জানাটা বাধ্যতামূলক। শিশুরা সাঁতার কাটতে পারে না। সাঁতার শিখতে হলে কমপক্ষে আট বছর বয়সী হতে হয়। তাই আট বছর পর্যন্ত শিশুদের কোমরে রশি বাঁধা থাকে।
জাফর নামে অপর একজন বলেন, আট বছর কিংবা সাঁতার শেখার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নদ-নদীতে ভাসমান সব বেদে পল্লীর শিশুদেরই চোখে চোখে রাখতে হয়। তারপরও প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। নদীতে ডুবে অনেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তাই শিশুদের রক্ষা করতে কোমরে রশি বেঁধে দেওয়া হয়। আর সেই রশির ওপর প্রান্তের নিয়ন্ত্রণ থাকে বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে। যদি কোনো ভাবে শিশুটি নদীতে পড়ে যায় তাহলে এ রশির মাধ্যমে তাকে সঙ্গে সঙ্গে টেনে তোলা যায়।

বেদে পল্লীর সরদার জসিম বলেন, ‘নদী বেদে পল্লীর অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি কইর‌া (করে) হালাইছে (ফেলেছে)। তাই রশি বাইন্দা (বেধে) রাখলে পোলাপানডি (শিশুরা) ভালোভাবে নৌকায় থাইক্যাই (থেকেই) দুষ্টামি হরতে (করতে) পারে। নৌকার কোনা-কানায় গ্যালে (গেলে) রশি ধইরা টান দেলেই শিশুরাও বড়গো কাছে দ্রুত চইল্যা (চলে) আহে (আসে)। এভাবে শুধু মোগো (আমাদের) পল্লীর না, অন্য পল্লীগুলারও বাচ্চা পোলাপানের জীবন রক্ষা পাইছে। ’
রফিক নামে বেদে পল্লীর আরেক এক বাসিন্দা জানান, ‘বেদে পল্লীর জীবন-ধারণ যেমন কষ্টের তেমনি মৃত্যু হলেও সেটা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়। ’

তিনি বলেন, মোগো (আমাদের) এহানে (এখানে) গত দুই থেকে চার মাসে কেউ মরে নাই। আর কারও করোনাও হয় নাই। তবে কেউ মরলে তার দাফন দেতে (দিতে) ঝামেলা হয়। কারণ মোগো তো কোনো জমি নাই। কয়েকমাস আগে একজন মারা গেছিলো। হ্যারে (তাকে) পাশের একটা গ্রামে নিয়ে স্থানীয়দের (মানুষকে) কইয়া (বলে) দাফন দেওয়ানের (দেওয়ার) ব্যবস্থা করতে হইছে (হয়েছে)। ’

প্রসঙ্গত, বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীতে বছরের পর বছর ধরে শতাধিক নৌকায় বসবাস করছে ৬৪টি বেদে পরিবার। যাদের নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের নৌকাতেই জীবনযাপন করতে হয়। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপের খেলা দেখানো, কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, মৎস্য শিকার করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।