সিলেট: সিলেটে সমাজসেবা অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ছোটমনি নিবাসে নাবিলা আহমদ নামে দুই মাস ১১ দিন বয়সী এক শিশুকে আছাড় ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আয়া সুলতানা ফেরদৌস সিদ্দিকাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
অভিযুক্ত সুলতানা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের চেলার চর গ্রামের শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী ও মফিজুল ইসলামের মেয়ে।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২২ জুলাই রাতে কান্না করছিল অবুঝ শিশুটি। এ সময় রেগে যান সেখানে দায়িত্বে থাকা আয়া সুলতানা। রাত ১০টা ৯মিনিটের দিকে শিশুটিকে এক বিছানা থেকে অন্য বিছানায় নিয়ে সজোরে আছাড় মারেন তিনি। এরপর মাথার ওপর বালিশ দিয়ে চাপ দিয়ে রাখেন। প্রচণ্ড আঘাতে এবং বালিশ চাপায় শিশুটি দম বন্ধ হয়ে অচেতন হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর ছাড়পত্রে স্পট ডেথ উল্লেখ রয়েছে।
শিশুটির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে সিলেট সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিনকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে সিসিটিভি ক্যামেরার দৃশ্য ও হত্যার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া হয়। গত ৩০ জুলাই কোতোয়ালি থানায় শিশুটির স্বাভাবিক মৃত্যু দেখিয়ে একটি প্রতিবেদন দেন ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রূপন দেব। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও সত্য গোপন রাখেন সমাজ সেবা ও ছোট মনি নিবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরে অপমৃত্যুর মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে হত্যার আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা করবে পুলিশ। এর আগে এরকম কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিল কিনা? রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। ’
তিনি বলেন, ‘সমাজ সেবার চিঠিতে হত্যার বিষয়টি গোপন করা হয়েছে। তারা বলেছে হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশুর মৃত্যু হয়। অথচ চিকিৎসকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিশুটির মৃত্যু ঘটনাস্থলেই হয়েছে। আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। ’
এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ ছোটমনি নিবাসে মোট ৪২ শিশু থাকতো। একজনকে হত্যার পর বাকি ৪১ জন শিশুর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ’
ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রূপন রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনা গত ২২ জুলাই রাতের। আমাকে পরদিন সকালে জানানো হয়, নাবিল নামের এক শিশু নড়াচড়া করছে না। পরে হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। ’
তিনি বলেন, ‘মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গত ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তের পর শিশুটির দাফন সম্পন্ন হয়। ’
এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নিবাস রঞ্জন দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনার পর সহকারী পরিচালককে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পুলিশ পাঠানোর পর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২১
এনইউ/আরআইএস