ঢাকা, শুক্রবার, ২২ ভাদ্র ১৪৩১, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে ব্যয় পার্থক্য ৪০৭ কোটি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
১২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে ব্যয় পার্থক্য ৪০৭ কোটি

ঢাকা: উত্তরবঙ্গে ‘নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এলাকায় ১২ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই ব্যয় প্রাক্কলনে ৪০৭ কোটি টাকার পার্থক্য দেখা গেছে।  

প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ‘নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নেসকোর প্রস্তাবিত ব্যয় ৭২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় নেসকো। প্রকল্পটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বাস্তবায়িত হবে।

ইতোমধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে নেসকো। প্রস্তাবিত প্রকল্পে দেখা গেছে, প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের জন্য নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বুয়েটের একজন প্রফেসর প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। তবে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ঝুঁকি আছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত দেননি। পরামর্শকের মাধ্যমে মোট প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩১৫ কোটি ০৮ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, নেসকোর প্রস্তাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পের শুরুতেই ব্যয় প্রাক্কলনের পার্থক্য হয়েছে ৪০৭ কোটি ৮৪ লাখ। এ বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগ। এ বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা করা আবশ্যক বলে জানায় কমিশন।
 
এছাড়া প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ডিপিপিতে ‘উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা ডিপিপিতে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে বলে জানায় কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খানের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। সভায় প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এই প্রসঙ্গে শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পিইসি সভা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন নিয়ে আমরা কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এগুলো যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়গুলো নেসকো ঠিক করে আনলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
প্রকল্পের উদ্দেশ্যসমূহ সুনির্দিষ্ট করা আবশ্যক। অর্থাৎ কি পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, সিস্টেম লস কত কমবে, লোড নিয়ন্ত্রণ এবং বিলিং ব্যবস্থা কতখানি সহজীকরণ করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করা আবশ্যক বলে মত দিয়েছে কমিশন।

অন্যদিকে নেসকো জানায়, প্রকল্পের উদেশ্য অগ্রিম রাজস্ব আদায়, সিস্টেম লস কমানো, বিলিং ব্যবস্থা সহজিকরণ, গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মনোভাব সৃষ্টি, লোড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা সহজিকরণ এবং উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান।
 
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি জেলার সদর উপজেলাসহ ৩৯টি উপজেলা নিয়ে নেসকো গঠিত। এসব জেলায় (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকা ছাড়া বাকি অঞ্চল) নেসকো দ্বারা বিদ্যুতায়ন করা হয়। বর্তমানে নেসকোর আওতায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৪৩ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যমান মিটারিং সিস্টেমে নেসকোর নন-টেকনিক্যাল সিস্টেম লস তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়া পোস্ট পেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। অনেক সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিল বকেয়া থাকে, যা আদায় করা অনেক সময় কষ্টসাধ্য। নেসকোর ৫৫টি বিতরণ বিভাগ/ ইউনিটের মধ্যে যেগুলোতে সিস্টেম লস বেশি। স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের মাধ্যমে সিস্টেম লস অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং বকেয়া বিল আদায় করা সহজ হবে। এছাড়া গ্রাহকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত লোডের অতিরিক্ত লোড ব্যবহার করলে মিটার টেম্পারের সংকেত দেখাবে এবং লোড বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এভাবে লোড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উন্নত গ্রাহক সেবা প্রদান সম্ভব হবে ।
 
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো- ১১ লাখ ১৩ হাজার ৬০৮টি সিঙ্গেল ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ক্রয় ও স্থাপন, ৮৬ হাজার ৩৯২টি থ্রি ফেজ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ক্রয় ও স্থাপন, ১৩ হাজার ৬১৯টি ডাটা কনসেন্ট্রেটর ইউনিট ক্রয় ও স্থাপন ও তিনটি হেড ইন সিস্টেম স্থাপন করা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।