ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হরিণার বিলে দেড় হাজার বিঘার আমন চারা পানির নিচে 

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
হরিণার বিলে দেড় হাজার বিঘার আমন চারা পানির নিচে  পানির নিচে আমনের চারা। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: ঘের কেটে মাছ চাষ করায় যশোর সদরের চাঁচড়ার হরিণার বিলের আবাদী জমি তলিয়ে গেছে। ফলে চলতি রোপা আমন মৌসুমে বিলের দেড় হাজার বিঘা জমি অনাবাদী পড়ে আছে।

 

বিলের সাড়াঘুটো অংশে ধান ক্ষেতে ২৫টির বেশি মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। ফসলি জমি খনন করে চারপাশ উঁচু করে ঘিরে মাছ চাষ করায় বিলের পানি নিষ্কাসন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে প্রতি বর্ষা মৌসুমে বিলের বিস্তীর্ণ এই অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।  

সরেজমিন হরিণার বিলের সাড়াঘুটো (দক্ষিণ সাড়াপোল) ও খড়িঞ্চাডাঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিলের জমি খনন করে চারপাশ মাটি দিয়ে ঘিরে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ চলছে। এতে দেড় হাজার বিঘার মতো জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সদ্য রোপণ করা আমন ধানের চারা পচে গেছে। এমনকি হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় বিলের কালাবাগা সংলগ্ন অংশ ও রূপদিয়ায় এখনও রোপা আমনের চারা রোপণ করতে পারেননি চাষিরা।  

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে যশোর শহরের পানি এই হরিণার বিলে জমা হয়। পরবর্তীতে এই পানি বিলের মধ্যে দিয়ে খনন করা ‘জিয়া খাল’ হয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে বিলে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক মাছের ঘের তৈরি চলছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় বিলের জমিতে আমন ফসল হচ্ছে না। ভারী বর্ষণ হলে বিলের আশপাশে অন্তত ৫টি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  
 
স্থানীয়রা বলছেন, যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের সাড়াপোল, রূপদিয়া, ভাতুড়িয়া ও মাহিদিয়াসহ রাজারহাট পর্যন্ত এই বিলের বিস্তৃতি। গত কয়েক বছর আগেও বিলের কৃষি জমিতে ইরি ও রোপা আমন চাষাবাদ হতো। কিন্তু বছর দুই ধরে হরিণার বিলে ছোট-বড় প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ঘের খনন করায় বিলের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে বিলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বর্তমানে বিলের প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।  

চাঁচড়ার উত্তর ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান এবার বিলে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলেন। জমিতে তার রোপণ করা চারা সবুজ রং ধারণ করার পরে শুরু হয় বৃষ্টি। আর বৃষ্টির পানি বিল থেকে বের হতে না পারায় তার ৫ বিঘা জমি ডুবে গেছে।  

তিনি বলেন, গত বছর আমন মৌসুমে এই ৫ বিঘা জমিতে ৭৫ মণ ধান পেয়েছিলাম। এবার ১৫ হাজার টাকা খরচ করে জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। বিলে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় আমার সেই ধানের জমিতে এখন কোমর সমান পানি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ১৫ হাজার টাকার সবটাই জলে গেছে। মাছের ঘের কাটার ফলে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।  

একই এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হরিণার বিলে আমার ১০ বিঘা ধানের জমি ডুবে গেছে। বর্ষা মৌসুমে শহরের পানি এই হরিণার বিলে জমা হয়। ওই পানি বিল হয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ চাষাবাদে নামে। আর যে পানিটুকু থাকে সেটুকু দিয়ে তারা কৃষিকাজ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে মাছের ঘেরের কারণে এবং বিলের জিয়া খালে পাটা দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার তার ১০ বিঘা জমির ধানের চারা পচে গেছে। হরিণার বিল তীরবর্তী মানুষের বেশির ভাগেরই এই বিল ছাড়া অন্য জমি নাই। এই জমির ফসলই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।  

উত্তর ভাতুড়িয়া গ্রামের অনিল ঘোষ জানান, যশোর শহরের প্রভাবশালীরা হরিণার বিলে কিছু জমি লিজ নিয়ে ও কিছু জমি কিনে মাছের ঘের করছেন। এমনকি ঘেরের পাশে যাদের জমি আছে তাদেরও জমি ঘের তৈরিতে দেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগও করেন।  

তিনি আরো জানান, ঘের হওয়ার আগে এই বিলে চাষাবাদ হতো। কিন্তু ঘের হওয়ার পর ঘেরে পানি ধরে রাখতে বিলের পানি বের হওয়ায় জন্য খনন করা জিয়া খালের বিভিন্ন জায়গায় পাটা দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন চাষাবাদ হচ্ছে না, তেমনি হরিণার বিলের আশপাশের ৫টি গ্রামের কয়েকশ বাড়ি তলিয়ে গেছে।  

হরিণার বিলের পানি নিষ্কাশনে ব্যাপারে যশোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। স্থানীয় মানুষের সমস্যা সৃষ্টি করে কোনো কাজ করা যাবে না। কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। শুনা মাত্রই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সমাধান করার নির্দেশনা দিয়েছি। কোনোমতেই কৃষি জমিতে আবাদ নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না। হরিণার বিলে জলাবদ্ধতায় কতটুকু জমির আবাদ নষ্ট হয়েছে সেটার তালিকা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এই কর্মকর্তা।   

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২১
ইউজি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।