ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

১১৫ বছরেও মনে আছে পায়ে হেঁটে হজ করার ঘটনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
১১৫ বছরেও মনে আছে পায়ে হেঁটে হজ করার ঘটনা মোহাম্মদ মহি উদ্দিন

দিনাজপুর: ‘বহু আশা করেছিলাম হজ করবো। এই হজ করার কাগজপত্র ঠিক করতে সময় লেগেছে আমার তিন মাস।

ডিসির (জেলা প্রশাসক) অনুমতি নিলাম। পাকিস্তান আমলের রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেতে সময় লেগে গেছে আরও তিন মাস। সমস্ত কাগজপত্র এক করলাম। তারপর ঢাকায় আমার এক ভাতিজা চাকরি করতো, তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। চলে গেলাম তার কাছে। সে নিয়ে গেলো আমায় চিটাগাঙে (চট্টগ্রামে)। সে আমাকে বললো পানি জাহাজে উঠতে। তারপরে হুসেনে এনার্জি নামে একটি পানি জাহাজে উঠিয়ে দিলো। ওই পানি জাহাজ ছিল এক শেঠের (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)। যাত্রা শুরু হলো পতেঙ্গা থেকে। ’  

কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ মহি উদ্দিন। তিনি হলেন হেঁটে হজ করা একমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৬ সালে ১০ আগস্ট। তার বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯ নম্বর আস্কপুর ইউনিয়নের রামসাগর দিঘিপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত ইজার উদ্দিন। তারণ্যে যে উদ্দীপনা শরীরে বহাল ছিল, বার্ধক্যজনিত কারণে আজ তা নুয়ে পড়েছে। লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে হয় ১১৫ বছর বয়সী হাজী মহি উদ্দিনকে। তবে আধো আধো ভাষায় এখনো বলতে পারেন হাঁটা পথে হজের কথা। মুখস্ত বলতে পারেন হেঁটে পাড়ি দেওয়া ৩০টি দেশের নাম। যদিও কথাগুলো অস্পষ্ট।  

মোহাম্মদ মহি উদ্দিন নিজ ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে বলেন, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, এরপর চলে গেলাম বঙ্গোপসাগরে। তারপর একে একে পাকিস্তান, করাচি, খায়রান, জর্ডান, আফগানিস্তান, বেদুসী, বশরা, তেহরান, ইরান, ইরাক, বাগদাদ, কারওয়ানা, কুপার, সাম, মিশর, কুয়েত, রিয়াদ, তাহের, মক্কা, সর্বশেষে দেখা পেলাম মদিনার। মদিনায় পৌঁছিয়ে তিনমাস ইসমাইল নামে এক খাদেমের পদধুলি নিয়েছি।  

তিনি বলেন, সবাই যদি প্লেনে না গিয়ে হেঁটে হজ করতে যান, তবে বহুদেশে দেখতে পারবেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ মহি উদ্দিন হজ করেছিলেন ১৯৬৮ সালে। সেই সময় তার কাছে হজ করার মতো আর্থিক সার্মথ্য ছিল না। তবে এলাকাবাসীর সহায়তায় তিনি হজ করতে যান। তার হজ যাত্রায় সময় লেগেছিল ১৮ মাস।  

তার এই ভ্রমণ কাহিনী শুনতে স্বজনরা, এলাকাবাসী, দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অনেকেই। উদ্দেশে কেবল ঘটনা শোনা, আর হজের নিয়ম-কানুন জানা। এমন অভিভাবক পেয়ে সবাই খুশি। তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন সবাই।  

মোহাম্মদ মহি উদ্দিনের দুই ছেলে ও চার মেয়ের বাবা। তার বড় জামাতা মকসেদ আলী। তিনি বলেন, আমি ১৭ সালে হজ করেছি। আমরা তো গিয়েছি প্লেনে চড়ে। আমার শ্বশুরের বয়সও হয়েছে অনেক। সবাই আমরা অবাক, যে তিনি এতো বয়সেও সব কিছু বলতে পারেন। আল্লাহ উনাকে দীর্ঘায়ু ও সুস্থ রাখুক, এটাই কমনা।

খানপুর উত্তরপাড়া ডাঙাপাড়া এলাকায় তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সেই স্থানেও অনেক লোক তাকে অভিভাবক হিসেবে মানেন। কথা হয় ওই এলাকার মসজিদের ইমাম বাবুল আক্তারের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, মোহাম্মদ মহি উদ্দিন আমার চাচাতো ভাইয়ের শ্বশুর হন। তিনি আসলেই আমাদের অভিভাবক। এমন একজন মানুষ আমাদের ছায়াতলের মতো। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তার আয়ু আরও বাড়িয়ে দেয়।  

 

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।