ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনালেন প্রতিমন্ত্রী

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনালেন প্রতিমন্ত্রী ...

সাভার (ঢাকা): ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার বিচারের রায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ে শোনালেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে ২০০৪ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্বরণে আশুলিয়ায় আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে সেই রায়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন, 'হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় ট্রাইব্যুনালের পূর্ণাঙ্গ রায়। বিএনপি'র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তৎকালীন বিএনপি'র যুগ্ন মহাসচিব তারেকের আশ্বাসে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এ ব্যপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছিল জঙ্গিরা। ভারকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীরা গ্রেনেড হামলার কিছুদিন আগে বনানীর হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফর রহমান বাবর, তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সচিব হারিস চৌধুরি, তৎকালীন মন্ত্রী ও জামায়াত নেতা আলী হায়দার মোহাম্মদ মুজাহিদী, ব্যবস্থা সেনা গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল অব. রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের তৎকালীন বিজি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম। তারা সবাই একসঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক করেন। বৈঠকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করার সহযোগিতা চায় জঙ্গিরা। সে সময় তারেক রহমান উপস্থিত সবার সামনে জঙ্গিদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আর এই হামলার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তার দলকে নেতৃত্ব শূন্য করা। '

'একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শাহেদ নুরুদ্দিন। মামলার ঘটনা স্থল পরিদর্শন, জব্দ কৃত আলামত, রাস্ট্রপক্ষের সাক্ষী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালচনা করে রায়ে বলা হয় যে, গ্রেনেড হামলা চালানোর উদ্দেশ্য হলো উজি, হিজবুল মুজাহিদিসহ নানা জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড এদেশে নির্দিধায় চালিয়ে যাওয়া। স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধাের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করে দেশের উন্নয়নে ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে ধংস্ব করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্টে পরিনত করা৷ এছাড়া অবস্থানগত ও ক্ষমতা কত লাভের উদ্দেশ্য এখানে কাজ করেছে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়। বৃহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০২ সালের জুলাই মাসে মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের কাছে, ২০০৩ সালে একই এলাকার সাত গম্বুজ মসজিদে ও ২০০৪ সালের প্রথম আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে হাওয়া ভবনে উপ মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবন ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল আসামিরা। এসব সভায় আসামিরা তারেক রহমানসহ তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকতাদের কাছ থেকে প্রশাসনিক সুবিধা নিতো জঙ্গিরা৷ বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় হামলার কাজটির জন্য সহজ হবে ভেবে ২০০৪ সালের প্রথম দিকে এমপি কাউকোবাদের সহযোগিতায় হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিস চৌধুরির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পরিচিত হন জঙ্গিরা। '

'রায়ে বলা হয়, ঘটনার দিন রেজ্জাকুল হায়দার ও আব্দুর রহিম গ্রেনেড হামলার বিষয়ে অবগত থেকেও গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। এভাবে নিরব থেকে প্রশাসনিক সহয়তায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভা নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক আইনজীবী ও সাংবাদিক আহত হন৷ অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

রায়ে প্রধান আসামির জবানবন্দীতে মুফতি হান্নান বলেছেন, গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য তারা প্রশাসনিক সহায়তা পেয়েছেন। আর ওই গ্রেনড সরবরাহকারী হিসেবে আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মওলানা তাজুদ্দিনের নাম তৎকালীন আইজিপির প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। কিন্তু তাজুদ্দিনকে এ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সেদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। ফলে এটা স্পষ্ট যে জঙ্গিরা হামলায় প্রশাসনিক সহযোগিতা পেয়েছে। হামলাকারীদের বিষয়ে জানা থাকলেও তাদের বিষয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য নানা কৌশলে অন্যদের উপর দায় চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা জন্য জজ মিয়া, আবুল হাসেম রানা ও শরিফুল ইসলামদের দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী ও রেকর্ড লিপিবদ্ধ করা। একইসঙ্গে অপরাধীদের রক্ষায় ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী, গ্রেনেড সরবরাহকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। '

'প্রসঙ্গত, এ দুটি মামলায় গত ১০ অক্টোবর ২০২০ সালে আসামি বাবর, পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এবং দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই দেশি ও বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একইসঙ্গে একই অপরাধে তারেক রহমান ও হারেস চৌধুরীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দু'টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় গত মাসে প্রকাশ করে  ট্রাইবুনাল৷'

আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন- আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগে আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহবায়ক কবির হোসেন সরকার, যুগ্ম আহবায়ক মইনুল ইসলাম ভূইয়া, ছাত্রলীগ নেতা অপু, আকাশসহ আরও অনেকই।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।