ফরিদপুর: ফরিদপুরে হু হু করে বাড়ছে পদ্মার পানি। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই এলাকার নিম্নাঞ্চলে বসবাস করা মানুষের মধ্যে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফরিদপুর সদরের তিনটি ইউনিয়নের ৪১টি গ্রামের কমপক্ষে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ইতোমধ্যে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের দুর্গত ৪০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি ইউনিয়নের ৩৫০ পরিবারের মধ্যে আজ রোববার (২২ আগস্ট) ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিক্রির চরে ২৫০ প্যাকেট ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়নে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, আধা লিটার তেল, আধা কেজি চিড়া ও আধা কেজি চিনি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের এক হাজার ১৬০ পরিবার, ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ১ হাজার ৫০০ পরিবার ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
ডিক্রির চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, বন্যার পানির তোড়ে নাজিম বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামে যাওয়ার ইট বিছানো সড়ক প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এবং ব্যাপারী ডাঙ্গী সড়কের ৫০ মিটার অংশ পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী গ্রামের ১৬ একর, আলিমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের ৩ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও দেড় হাজার কলা গাছের একটি বাগান ভেঙে গেছে পানির স্রোতে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন মতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা কবির শেখ বলেন, আমার বাড়ির আশপাশের সব বাড়ি তলিয়ে গেছে। আমার উঠোনেও পানি। এইভাবে পানি বাড়লে ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
একই ইউনিয়নের সুলতান খাঁর ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ সমিরন বিবি বলেন, আশপাশে পানি থই থই করতাছে। সব রাস্তাও তলিয়ে গেছে। পানি আর একটু বাড়লে ঘরে ঢুকে যাবে। তখন সমস্যায় পড়বো পোলাপান আর গরু ছাগল নিয়া।
চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, যে সাহায্য সরকার থেকে আসতেছে তা নিয়ে জনগণের কাছে গেলে লজ্জায় পড়তে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তুলনায় ত্রাণ সহায়তা খুবই কম। আমার ইউনিয়নে পানিবন্দি তিন হাজার পরিবার। বিপরীতে বরাদ্দ পেয়েছি ১০০ প্যাকেট খাবার।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করছি আগামী দুই-তিনদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা বলেন, বন্যার ঝুঁকিতে থাকা সদরের তিনটি ইউনিয়নের জন্য এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪০০ প্যাকেট শিশু খাদ্য ও ২০০ বস্তা (প্রতি গরুর জন্য এক বস্তা) গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
আরএ