বরিশাল: বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ পৌরমেয়ররা।
শনিবার (২১ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
তাদের মতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও থানা কাউন্সিলের ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও পর্যালোচনা করা হলে ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। যদিও মামলার তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মুলাদী পৌরমেয়র মো. শফিক উজ্জামান রুবেল বলেন, ঘটনা যা ঘটেছে তা প্রকাশ না করে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছিলো। কিন্তু এখন সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ওইদিন রাতের ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না করে পুরো তিন ঘণ্টার ভিডিও জনগণের সামনে তুলে ধরা হোক। তবে, যেটুকু ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তাতেই সিটি করপোশেনের বা আওয়ামী লীগের যারা ওখানে ছিলেন তাদের কারো হাতে অস্ত্র বা লাঠি দেখা যায়নি। বরং নির্বিচারে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল বিভাগীয় কমিটির নেত্রী ও গৌরনদীর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, বুধবারের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে ইউএনওর বাসার সিসি ক্যামেরার ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবকিছু যাচাই না করে সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্টাফ ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সদ্য বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এতে আমি মনে করি জনপ্রতিনিধিদের সহিত বিদ্যমান সুসম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে এবং মুখোমুখি করার প্রায়াস বলে আমাদের অ্যাসোসিয়েশন (বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন ) মনে করছে। যা দেশ ও জাতির স্বার্থে কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং দুঃখজনক ও বটে। ইতোমধ্যে আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি।
এদিকে বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান দাবি করেছেন ঘটনার দ্বিতীয় সেশনে কয়েকশত লোক হামলার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনে ঢুকে পড়েন এবং কিছু লোক তার ঘরের দরজার সামনে চলে এলে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা ফোর্স করেন।
আর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জানিয়েন, সিটি করপোরেশনের স্টাফদের ওপর গুলি করার খবরে তিনি সেখানে যান এবং নিজের পরিচয় দিয়ে থানা কাউন্সিল কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। তবে তার আগেই আনসার সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তার ওপর গুলি চালান। তাৎক্ষণিক গেটের বাইরে থাকা কাউন্সিলররা ও নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেন এবং সেখান থেকে বাইরে এনে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
স্থানীয়রা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, ঘটনার রাতে ১০টার দিক থেকে গুলির শব্দে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে তারাও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, স্টাফ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছেন।
তাদের দাবি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আনসারদের গুলির কারণে প্রধান ফটকের ভেতরে যেতে পারেনি, পরে পুলিশ এসেও বাধ সাধে। তাই তারা থানা কাউন্সিলের সামনে থেকে ইটপাটকেল ভেতরে নিক্ষেপ করে কিন্তু কাউকে কোনো ধরনের অস্ত্র বহন করতে দেখা যায়নি।
এ ঘটনা ঘটার পর থেকে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, বুধবারের রাতের ঘটনায় তিনি দোষী হলে প্রধানমন্ত্রী যে শাস্তি দেবেন তা মেনে নিতেও রাজি আছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মুলাদী পৌরমেয়র মো. শফিক উজ্জামান রুবেল বলেন, ঘটনা যা ঘটেছে তা প্রকাশ না করে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছিলো, কিন্তু এখন সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২১
এমএস/এএটি