বরিশাল: গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ইউএনওর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে ৬০ জনের মতো আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদের মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের একজন সদস্য (মেম্বার) ও দুই আওয়ামীলীগ নেতা তাদের একটি করে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, ১৮ আগস্ট রাতে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনায় মানুষের শরীরে সরাসরি ছোড়া গুলির ঘটনা সুষ্ঠু বিচার এবং যেকোনো মূল্যে চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হোক। বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার) মো. আতিকুর রহমান রায়হান, যিনি ঘটনার রাতে আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাড়িতে থাকা তার বৃদ্ধ বাবা আমির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাতে কোনো এক জায়গায় সালিশ বৈঠকে থাকার কথা ছিলো রায়হানের। তবে সিটি করপোরেশনের মেয়রের ওপর গুলি ছোড়ার খবর পেয়ে সে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মোল্লার সঙ্গে থানা কাউন্সিল (বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ) এলাকায় যায়। আর সেখান থেকে আনসারদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
তিনি বলেন, গুলিতে দুই চোখ গুরুতর জখম হলে বরিশাল থেকে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু ঢাকা গিয়েও কোনো লাভ হলো না, একটি চোখে সে দেখছে না। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে হবে। আমি চাই সন্তানের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরুক। এর বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
রায়হানের স্বজন শারমিন বেগম সামিয়া বলেন, ওর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বহু পিন বা ঝররা গুলি লেগেছে। বিশেষ করে তার দুই চোখে। বাম চোখটি কোনোভাবে রক্ষা হলেও ডান চোখে সে দেখছে না। কারণ সেখান থেকে গুলি বের করা যায়নি। আর চিকিৎসকরা বলছেন এটি বের করতে গেলে তার মস্তিস্কে সমস্যা হতে পারে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে হবে। তবুও সেখানে নিলে যে ভালো হবে এমন নয়, হলে গড গিফটেড বিষয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কোথায় কীভাবে নেবো, সেই ভরসা পাইনি এখনো।
রায়হানের মা নুরজাহান বেগম বলেন, এলাকার মানুষ আর চেয়ারম্যান ছাড়া আর কেউ আমাদের বা ছেলের খোঁজ নিচ্ছে না। কত মানত করছি, কত কান্নাকাটি করতাছি ছেলেটার চোখের দৃষ্টিশক্তি যেন স্বাভাবিক থাকে।
তিনি বলেন, এ ধরনের রাজনীতি আমরা চায় না। যতদূর শুনছি ওখানে গুলি হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি, তাহলে কেন এভাবে শরীরে গুলি করা হলো। আবার পুলিশের কারণে ছেলের চিকিৎসাও করাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই আর ছেলের চোখটা ফেরত চাই।
এদিকে বরিশাল নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনিরও ঘটনার রাতে আনসার সদস্যদের ছোড়া গুলিতে আহত হন। বর্তমানে তার পরিবারের সবাই ঘরে তালা দিয়ে বরিশালের বাইরে অবস্থান করছেন চিকিৎসার কারণে।
বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলামের বেয়াই জহিরুল ইসলাম বলেন, যতটা জানতে পেরেছি ওই রাতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, গুলি ছুড়তে হবে। আর ঘটনাস্থল বাড়ির পাশেই হওয়ায় মনির ভাই সেখানে বিষয়টি দেখতে যান এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তিনি। মনির ভাইয়ের সারা শরীরে ৪২টির মতো গুলির পিন লেগেছে। তার ডান চোখ গুলিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দৃষ্টিশক্তি তিনি হারিয়েছেন। আমরা চাই সু-চিকিৎসার মাধ্যমে তার দৃষ্টি ফিরে আসুক।
অপরদিকে নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা তানভীরের স্ত্রী জান্নাতি আক্তার বলেন, বিকেলে বাসায় ৪ মাসের শিশু সন্তানের সঙ্গেই ছিলেন। সন্ধ্যার পর বাসা থেকে ভালোভাবেই বের হন। এরপর রাত ১২টার দিকে জানতে পারি থানা কাউন্সিলের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন কিন্তু পুলিশের কারণে নিতে বহু বিলম্ব হয়েছে। আর ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত। ৮০ শতাংশের মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোটাই হারাবেন।
তানভীরের মা মহাসিনা পারভীন বলেন, আমার ছেলের সারা শরীরে ৫০টির মতো গুলির পিন রয়েছে। আমি ছেলের চোখ ভালো হয়ে যাক সে কামনা করছি। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী দেশে এর থেকে ভালো আর কিছু সম্ভব নয়, তাই বিদেশে নিয়ে হলেও চিকিৎসা হোক।
তিনি বলেন, সিটি মেয়র প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজ রাখছেন, তিনি আশ্বস্ত করেছেন দেশের বাইরে নিয়ে হলেও তানভীরের চোখের চিকিৎসা করাবেন। স্বাধীন দেশে এভাবে সন্তানের গায়ে সরাসরি গুলি ছোড়ার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আহসান বাদশা বীর প্রতীকের এই স্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২১
এমএস/এএটি