সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার ডিস ব্যবসায়ী এলিম সরকার (৪২) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার প্রায় ৫ মাস পর এতে জড়িত থাকার দায়ে স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমিলিসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঢাকা জেলা পিবিআই সদস্যরা মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) আশুলিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। মূলত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো পর পরকীয়া প্রেমিককে দিয়ে এলিম সরকারকে খুন করান স্ত্রী কেমিলি।
বুধবার (২৫ আগস্ট) পিবিআই ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেফতার অপরজন হলেন- নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার তেলটুপি গ্রামের আ. সামাদের ছেলে মো. রবিউল করিম পিন্টু (৩৫)। তিনি কেমিলির পরকীয়া প্রেমিক।
অপরদিকে নিহত এলিম সরকার আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার হাজী মো. ফজল হক সরকারের ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ রাত ১০টার দিকে রাতের খাওয়া শেষে এলিম স্ত্রী-সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকাল ৮টার দিকে স্ত্রী কেমিলি ঘুম থেকে উঠে জরুরি প্রয়োজনে এলিমের বাবা ফজলের বাড়িতে যান। সেখানে থেকে সকাল ১০টার দিকে ফিরে আসেন। বাসায় ঢুকেই স্বামী এলিমের গলার নিচে একটি, পেটে ১১টি ও পিঠে ধারালা অস্ত্রের আঘাত দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। তখন আশপাশের লোকজন এসে খাটের ওপর এলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
এ ঘটনার পর মামলার তদন্তভার চলে যায় পিবিআইয়ের কাছে। এক মাস তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই সালেহ ইমরান হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন।
তিনি জানান, গ্রেফতার পিন্টু আশুলিয়া এলাকায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। সেই সুবাধে বাসায় বিদ্যুতের মিটার লাগানোর কাজ করতে গিয়ে ভিকটিমের স্ত্রী কেমিলির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি স্বামী এলিম টের পেয়ে যান। পরে শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের ডেকে তা প্রকাশ করে দেবেন বলে স্ত্রীকে জানান।
এনিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এরপর পরকীয়ার বিষয়টি যাতে অন্য কেউ জানতে না পারে সেজন্য কেমিলি ও তার পরকীয়া প্রেমিক পিন্টু মিলে এলিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পিন্টু ভিকটিমের বাড়িতে দু’জন ভাড়াটিয়া খুনিকে বাসা ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু তারা হত্যা না করতে পারায় পিন্টু নিজেই কাজটি করার পরিকল্পনা করেন। ২৮ মার্চ সকাল ৯টার দিকে কেমিলির পরামর্শে পিন্টু তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাসায় ঢুকে। এর আগে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পিন্টু ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়া করে কেমিলিকে দেন রাতে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে এলিমকে খাওয়ানোর জন্য।
এলিম ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত দই খেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে সকালে পিন্টু তার অপর সহযোগীকে নিয়ে বাসায় ঢুকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে এলিমকে হত্যা করে পালিয়ে যান। এর আগে, ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজের ডিভিআর খুলে নিয়ে যায়।
এদিকে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্ত্রী কেমিলি ডিস ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রচার করেন।
এসআই সালেহ ইমরান আরও জানান, এ হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
এনটি