সিরাজগঞ্জ: ব্যক্তি নামীয় প্রতিষ্ঠানের বিধি-বিধান না মেনে বাবার নামে বিদ্যালয় স্থাপন এবং ২২ বছর ধরে নিজে সভাপতির দায়িত্বে থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দিঘীসগুনা এম.আর.এ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুলের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (রাজশাহী অঞ্চল) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যরা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালে তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের দিঘীসগুনা এম.এ.আর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল তার আস্থাভাজনদের সদস্য করে নিজে ২২ বছর ধরে সভাপতির পদ আকড়ে রয়েছেন। নানা অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করা হয় সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুলের ছেলে মির্জা ফারুক আহমেদকে। তিনি তখন পার্শ্ববর্তী জে.আই.বিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের হাজিরা স্বাক্ষর করে গেছেন।
বাবা সভাপতি ও ছেলে প্রধান শিক্ষক। পিতা-পুত্র মিলে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে আব্দুল হাকিম নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেন। যার নিয়োগের সময় দেখানো হয় ১৪ জানুয়ারি, ২০০৩ সাল। অথচ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পদে স্বাক্ষর করে গেছেন মির্জা ফারুক আহমেদ। এছাড়াও উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সভাপতি ও তার ছেলে মিলে টাকার বিনিময়ে একাধিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ এবং অব্যাহতি দেন। এরা হলেন মাসুম বিল্লাহ, কল্পনা খাতুন, আব্দুল মামুন ও মোখলেসুর রহমান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গ্রামবাসী ৯০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। গত ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যালয়ের নামীয় জমির মধ্য থেকে ৪০ শতাংশ অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল হাকিম দাতা সেজে এ জমি বিক্রি করেছেন।
এদিকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১০ জন শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এসব ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নেন সভাপতি মির্জা আব্দুর রশিদ বকুল ও তার ছেলে মির্জা ফারুক আহমেদ।
আব্দুল মামুন নামে এক ব্যক্তি জানান, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে প্রায় বছরখানেক স্কুলে আমি যাতায়াতও করেছি। আমাকে কাগজে কলমে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সেলিম প্রধান নামে এক ব্যক্তি বলেন, তার বোন কল্পনা খাতুনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হয়েছিল। ২০১৫-১৬ সালে বেশ কিছুদিন প্রধান শিক্ষক পদে চাকরিও করেছেন তার বোন। পরে কিছু টাকা ফেরত ও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সাবেক প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় দেড় বছর আমি প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করেছি। পরে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরের দেড় বিঘা সম্পত্তি রয়েছে ওই বিদ্যালয়ের নামে। বিনিময়ে আমাকে দপ্তরির চাকরি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে টাকার বিনিময়ে সভাপতির আত্মীয় ইউনুস আলীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, আজিজল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী ও আশরাফ আলীর কাছ থেকে ৪০ শতাংশ জমি কিনেছিলাম। স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় গ্রামবাসীর অনুরোধে ওই জমি স্কুলের নামে দিয়ে দেই। অথচ স্কুলের সেই জমি বেআইনিভাবে বিক্রি করা হয়েছে সভাপতির ছেলের কাছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাই দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ে যাই না। ২০০৩ সালে আমাকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও মাঝখানে অনেককেই এ পদে নিয়োগ এবং অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ জমি আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন সভাপতি ও তার ছেলে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম জানান, দিঘীসগুনা এম.এ.আর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এখনও অভিযোগটি পুরোপুরি দেখা হয়নি। এটি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২১
এসআই