ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঘোড়ার মাংস বিক্রির মামলা থেকে ২ আসামিকে অব্যাহতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
ঘোড়ার মাংস বিক্রির মামলা থেকে ২ আসামিকে অব্যাহতি

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ঘোড়ার মাংস বিক্রির অভিযোগে করা মামলা থেকে সানাউল্লাহ (৩২) ও হামিদুল রহমান (৩৩) নামে দুই ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।  

একই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করায় এজাহারকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক ও মামলার তদন্তে গাফফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলামকে তিরস্কার করা হয়েছে।

অন্যদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বোদার সহাকারী কমিশনার ভূমি ও বোদা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত।

পঞ্চগড় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান গত মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) এ আদেশ দিলেও তা বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধায় প্রকাশ পায়।

এর আগে গত ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ২২ তারিখ জেলার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের চৌধুরীহাটে বিকেলে জবাইকৃত ঘোড়ার মাথা, চামড়া ছাড়ানো চারটি পা, ঘোড়ার দেহসহ মোট ৩৫ কেজি ঘোড়ার মাংস জব্দ করে বোদা থানা পুলিশ। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দিয়ে জব্দকৃত মাংস মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই দু’জনকে আটক করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের শেষে মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলাম আসামি সানাউল্লাহ এবং হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মতে বোদা থানায় চূড়ান্ত রিপোর্ট (নং-২৩, ২০/০৭/২০২০ ইং) দাখিল করে সেই পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিলের অনুমতি প্রার্থনা করেন। বিষয়টি নজরে এলে পুলিশের চূড়ান্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন আদালত।

এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘোড়ার মাংস খাওয়ার অভিযোগে এসআই লিপন কুমার বসাক আসামিদের বিরুদ্ধে ১৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) তৎসহ পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় মামলা করেন। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে বোদা থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এজাহারকারীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামিদের বৈধ ৩৫ কেজি ঘোড়ার মাংস জব্দ করেন।

আরো জানা যায়, মুসলিমদের হাদিস গ্রন্থ সহি বুখারীর (তাওহিদ প্রকাশনী) ৫৫১৯ ও ৫৫২০, মিশকাত শরীফের ৪১০৭ নং হাদিসে ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল বলে উল্লেখ আছে। মুসলিম হিসেবে হালাল প্রাণি জবেহ করা ও খাওয়া তাদের ধর্মীয় অধিকার। দেশের প্রচলিত আইনে ঘোড়ার মাংস খাওয়া নিষেধ মর্মে কোথাও উল্লেখ নেই। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বুখারি শরিফের ৫০০৯, ৫০১০ ও ৫০১৪ নং হাদিসে ঘোড়ার মাংস হালাল ও বৈধ উল্লেখ আছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সুবাহান জব্দকৃত ঘোড়ার মাংস কোনো রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়াই ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন, যা গ্রহণীয় নয়। ওই ঘোড়ার মাংসের রসায়নিক পরীক্ষা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা করেন। এ ঘটনায় কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনা ও ভুলের কারণে আসামিদ্বয় এ মামলায় সাতদিন হাজতবাস করেন, যা দুঃখজনক। ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল হওয়া সত্ত্বেও বিনা অপরাধে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের করায় এসআই লিপন কুমার বকাস ও মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়। এজন্য লিপন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসমকে দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকতে সতর্ক করে তিরস্কার করা হয়। এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বোদার সহাকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদ্বয়কে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মামলা থেকে আসামিদ্বয়কে অব্যাহতি দেওয়ার হয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়া দুই পুলিশ সদস্যকে তিরস্কারের বিষয়টিও শুনেছি। তবে এখনও লিখিতভাবে কোনো নোটিশ পাইনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।