ঢাকা: সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাভোকেট লুৎফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান সিলেট জেলার সাবেক বালাগঞ্জ থানা বর্তমানে ওসমানীগর উপজেলার ৩নম্বর পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের বড়হাজীপুর গ্রামে ১৯৪০ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি নিজ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে মৌলভীবাজার জেলার সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ সালে অংকে লেটার মার্কসহ কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন।
১৯৫৯ সালে সিলেট এমসি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং একই কলেজ থেকে আইএসসি এবং বিএসসি পরীক্ষা পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং এলএলবি পাস করে সিলেট জেলা কোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন।
১৯৬২ সালে তিনি এবং আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পুনর্গঠন করেন। তখন একমাত্র মরহুম ডা. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে ছিলেন। ১৯৬২ সালে তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ সিলেটে আইয়ূব খান বিরোধী আন্দোলন শুরু করে।
একই বছরে হামিদুর রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সিলেট থেকে তার নেতৃত্বে ১০ জন কাউন্সিলর যোগদান করেন। পুরান ঢাকার পাকিস্তান মাঠে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তিনি বালাগঞ্জ এবং ফেঞ্চুগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
পরবর্তী সময়ে আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পুনর্বাসন কাজে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদের সদস্য হন এবং হাতে লেখা সংবিধানে একজন দস্তখতকারী, সংবিধান পাস করায় অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরে তাকে আটক করে অনেক নির্যাতন করা হয়। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই তাকে সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
এমইউএম/এনইউ/ওএইচ/