ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মাছ তাজা রাখতে মেশানো হচ্ছে রং

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১
মাছ তাজা রাখতে মেশানো হচ্ছে রং

বাগেরহাট: ‘ভাই রং দিলে একটু ভালো ও মাছ তাজা দেখায় তাই রং দিই। খদ্দেররাও বেশি কেনে।

’ 

কথাটি বাংলানিউজকে বলছিলেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল মাছের বাজারে মাছ ব্যবসায়ী সোহেল।  

সোহেলের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরেক মাছ বিক্রেতা মো. হাফিজ বলেন, ‘বাজারের বড় দোকান থেকে মাছ কিনি, বাজারে এসে রং মিশ্রিত পানির মধ্যে ভিজিয়ে উঠিয়ে ঝাঁকায় রাখি। এতে ক্ষতি হয় কিনা জানিনা। ক্ষতি হলে দোকানে এই রং বিক্রি করবে কেন? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি। ’

জানা যায়, বাগেরহাটের খুচরো বাজারগুলোতে মাছের শরীরে রং দিয়ে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জেনেও অতিরিক্ত বিক্রির আশায় এই কাজ করছেন তারা। সাধারণ মানুষও সচেতনতার অভাবে রং দেওয়া মাছ কিনছেন। এই মাছ খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

এদিকে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, মাছে রং দেওয়ার সত্যতা পেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলার কচুয়া উপজেলার বাধাল মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাগরের বাইলা (তুলার ডাডি), জাবা, রয়নাসহ বেশকিছু রং দেওয়া মাছ ঝাঁকায় সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। কেউ কেউ এড়িয়ে যাচ্ছেন রং দেওয়া মাছ থেকে। তবে রং দেওয়া মাছের পাশাপাশি রং না দেওয়া মাছও রয়েছে বাজারে। এ চিত্র শুধু বাধাল বাজারের নয়, কচুয়া উপজেলার তালেশ্বর, সাইনবোর্ড, বাগেরহাট সদর উপজেলার মাজার মোড় বাজার, যাত্রাপুর বাজারসহ জেলার বেশিরভাগ বাজারের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন এক মাছ ব্যবসায়ী। কীভাবে মাছে রং দেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে বড় দোকান থেকে গোপনে প্যাকেটজাত রং ক্রয় করি। ঝাঁকার পাশে লাল রংয়ের বালতিতে পানির সঙ্গে রং গোলানো হয়। পরবর্তীকালে ঝাঁকায় মাছ তোলার আগে বালতির মধ্যে ভিজিয়ে মাছগুলো ঝাঁকায় রাখা বরফের ওপর রাখি।

মহিদুল, আমজেদ ও সোহরাফসহ কয়েকজন রং দেওয়া মাছের ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে এসে যেটা ভাল দেখায় সেই মাছই কিনি। এই মাছে রং দেওয়া তা জানতাম না। অন্য মাছ বিক্রেতেরাও কখনও আমাদের বলেনি এই মাছে রং দেওয়া।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি বাবুল সরদার বলেন, বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রং দিয়ে মাছ বিক্রি করছেন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাগেরহাট জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, মাছের বাজার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটে সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, কৃত্রিমভাবে মাছের রং পরিবর্তন করা ভোক্তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। প্রতিটি মাছ বাজারে অভিযান চালানো হবে। সেই সঙ্গে তারা যেসব জায়গা থেকে রং ক্রয় করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এমডি আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো ধরনের রং হচ্ছে ক্যামিক্যাল। এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে পাকস্থলি, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। মাছসহ যেসব খাদ্যে রং মিশ্রনের সুযোগ রয়েছে সেসব পন্য ক্রয়ে ভোক্তাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
এনটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।