মানিকগঞ্জ: পরিত্যাক্ত ও অপরিষ্কার জমিতে প্রায় ১০ বছর ধরে পলিথিনের ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আব্দুল রাজ্জাক সরকার (৯০) ও খৈমুন খাতুন (৭৫) এই দম্পতি। সংসার জীবনে ৪ ছেলে আর ২ মেয়ে কিন্তু কোনো সম্পত্তি না থাকায় দেখার কেউ নেই।
ওই একই স্থানে আব্দুল রাজ্জাকের ছেলেরা বসবাস করলেও কোনো খোঁজ খবর নেয় না তার। অথচ ওই বৃদ্ধের প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ টাকার ঔষধ সেবন করতে হয়, আর এর জোগান দেন তার স্ত্রী খৈমুন।
মহাসড়ক আর পৌরসভার অলিতে গলিতে সারাদিন প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে জেলা শহরের ওয়ারলেস গেটে প্রতি কেজি ১০ টাকায় বিক্রি করেন। আর সেই টাকা দিয়ে অসুস্থ স্বামীর জন্য ঔষধ কেনেন। ভোরে মহাসড়কের জাগীর নামক স্থানে বসে কাঁচামালের আড়ৎ আর ওই আড়তের পচা সবজি কুড়িয়ে এনে সেদ্ধ করে খাওয়ার উপযোগী করেন খৈমুন। এভাবেই চলছে এ দম্পত্তির জীবন সংগ্রাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মোল্লা বাজার নামক এলাকার আকিজের গোডাউনের পশ্চিম পাশে নিচু পরিত্যাক্ত জায়গায় পুরনো কাপড় ও ছেঁড়া-ফাটা পলিথিনের ছৈই তৈরি করে ওখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন রাজ্জাক-খৈমুন দম্পতি।
আব্দুল রাজ্জাক সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে আমি চাষের কাজ করতাম এখন আর পারি না বাবা, বুড়ি আবিজাবি ঘুটে বেচা-কেনা করে। ওই দিয়া যা হয় তাতেই চলতাছে। যেভাবেই আল্লাহ চালাইতাছে, সেভাবেই খাইতাছি’।
ছেলেরা এখানে থাকলেও কেন খোঁজ-খবর নেয় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্পত্তি নাই। তারাই ভাত পায় না, তারা আবার আমাগো ভাত দিবো কন থিকা। আমার বুড়ি যা আনে গোছামুছা তাই খাই’।
আব্দুল রাজ্জাক আরো বলেন, ‘কিছু নাই বাবা আমি অধম। রোড ঘাট ঘুইটা খাই। কখনো ডেকোরেটরের দোকানে কাম করি, আবার কখনো চাইয়া চিন্তা খাই’।
‘বুইড়া স্বামী নিয়া চলতে পারি না, পোলারা ভাত কাপড় দেয় না। হেরা কয় জন্ম দিছো, কোনো কর্ম দেও নাই। আমরাই তো বৌ পোলাপাইন নিয়া বাঁচি না, আমরা কি কইরা তোমারে ভাত দিমু। এহন আল্লাহ যা রাখছে তাই দিয়া খামু’ বলে জানান বৃদ্ধা খৈমুন।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না যে এই বৃদ্ধ দম্পতি এতটা কষ্টে জীবন-যাপন করছে। আমি আমার নিজ জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব, দ্রুত সময়ের মধ্যে তা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১
কেএআর