শ্রীপুর (গাজীপুর): অর্থের অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে ঘরের বারান্দার খুঁটিতে শিকলে বাঁধা রয়েছেন আরফিন (২০)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে পান বিক্রেতা আহম্মেদ আলীর দত্তক নেওয়া মেয়ে।
বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গাজীপুর গ্রামের নিজ বাড়ির বারান্দার খুঁটিতে শিকলে বাঁধা রয়েছেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন আরফিন। তার ঠিকমতো যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। গোসলও করেন না নিয়মিত।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, প্রায় ১৯ বছর আগে সন্তানহীন বাবা আহম্মেদ আলী পাশের গ্রাম থেকে এক বছরের আরফিনকে দত্তক এনে লালনপালন করে বড় করেন। আট বছর আগে আরফিনের বিয়ে হয় একই উপজেলার কেওয়া গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে আহাদউল্লার সঙ্গে। সেখানে ফুটফুটে আদিফা নামের এক কন্যাসন্তান জন্ম দেন আরফিন।
পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী আহাদউল্লা প্রতিনিয়তই শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন আরফিনকে। একপর্যায়ে তাদের সংসার ভেঙে যায়। এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। আরফিনকে দ্বিতীবার বিয়ে দেওয়া হয়। মানসিক সমস্যা থাকায় সেখানেও বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি আরও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
অসহায় বাবা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করেন আরফিনের। কিছুটা সুস্থ হলেও পরে টাকার অভাবে চিকিৎসা থেমে যায়। এখন শিকলে বন্দি করে তাকে রাখা হয়েছে বাড়িতে। তার অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে বাবা-মা ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকছেন ভাড়া বাসায়।
শিকলবন্দি আরফিনের বাবা বলেন, পান বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালাই। আমাদের পক্ষে মেয়ের চিকিৎসা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমার সহায় সম্বল বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করেছি। এখন আমার আর কোনো সম্পদ নেই যে, তা বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়ে যাব।
মেয়ের চিকিৎসা জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে আকুতি জানান আরফিনের বাবা। সেই সঙ্গে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, সঠিক চিকিৎসা পেলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন আরফিন। শিকলে বন্দি আরফিন যাতে সরকারিভাবে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই লক্ষ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সদয় দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আরফিনের সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১
জেএইচটি