বগুড়া: বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার আমেনা খাতুন (৮০) নিখোঁজ হওয়ার ২২ বছর পর নেপাল থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে তাকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা।
সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আমেনার নাতি আদিলুর রহমান আদিল।
এ দিন দুপুর ১টার দিকে নেপালের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান আমেনা খাতুন। সরকারি সহযোগিতায় বিনা খরচে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছর তার কোন খোঁজ না পাওয়ায় তার সন্তানদের ভোটার আইডিতে মায়ের নামের পূর্বে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে।
আমেনার নাতি আদিল জানান, আমেনা খাতুন প্রায় ৪০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামে তিন ছেলের জন্ম দেন তিনি। এরপর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্তায় আম্বিয়া নামে তার আরেক মেয়ের জন্ম হয়। ১৯৯৮ সালে তার ছেলে ফটিক মিয়া সৌদি আরবে যান। যেদিন ফটিক মিয়া ঢাকায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন, সেই দিন আমেনা খাতুনও বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। তখন থেকে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো তিনি মারা গেছেন।
গত ঈদুল ফিতরের আগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন আমেনা খাতুনের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, আমেনা নেপালে রয়েছেন। তার ছবি দেখান কর্মকর্তারা। ছবি দেখে আমেনা খাতুনের সন্তানেরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। গত শুক্রবার (০৩ সেপ্টেম্বর) নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম আমেনার সন্তানদের সঙ্গে তাকে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ভিডিও কলে আমেনা তার সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।
দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম শনিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, “নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রমাণিক। ২২ বছর আগে বগুড়ার ধুনটের আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তান তাকে খুঁজে না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মা আর বেঁচে নেই! তাদের ভোটার আইডিতে মায়ের নামের পূর্বে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্ধার আমেনার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স এখন ৬০ বছর। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ বিমানে নেপাল থেকে ঢাকায় তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে। আমি নিজেও একই বিমানে ঢাকায় আসব। ”
মাসুদ রানা ফেসবুকে আরও বলেন, “গত ৩০ মে নেপালে সুনসারি জেলার Qrc Inaruwa Sunsari এর Muk-esh Mehta তার ফেসবুকে ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র Jamuna Gautam পোখরেলের তত্ত্বাবধানে উদ্ধারকৃত একজন বাংলাদেশের নারী রয়েছে উল্লেখ করে একটি পোস্ট করেন। এতে Abhinav Chaudhary Chairman at Nepal Bangladesh youth Conclave আমাকে কমেন্টে মেনশন করেন। অতঃপর আমি ফোনে আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে ১ জুন কাঠমন্ডু থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে সুনরারিতে যাই। সে সময়ে নেপালব্যাপী লকডাউন এবং কোভিড আক্রান্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ইনারোয়াতে আমাকে সহায়তা করেন সুনসারি বাঙালি সমাজের সভাপতি বিপ্লব ঘোষ। ”
কউন্সিলর আরও বলেন, “দীর্ঘ সময় আমেনা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে তার ঠিকানা উদ্ধার করে আমাদের বগুড়া জেলা অফিসের প্রচেষ্টায় তার ঠিকানা ও পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হই। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে এই বৃদ্ধা অসহায় নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের নিকট পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের তার দেশের নাগরিক ও প্রবাসে অসহায় মানুষে প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনের একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত। আমিও সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষের সেবা করতে পেরে আনন্দে তৃপ্ত। মানুষ তো মানুষেরই জন্য। আমেনা বেগমের বাকি জীবনটুকু তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কাটুক—এ প্রত্যাশা করি। ”
আমেনার নাতি আদিল বলেন, সোমবার দুপুরে দাদিকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি আমরা।
বগুড়া এনএসআইয়ের উপপরিচালক মুজাহারুল ইসলাম মামুন বলেন, নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলমের তথ্য পেয়ে আমরা ওই নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করি। মাসুদ আলমের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১
কেইউএ/এমজেএফ