ঢাকা, শনিবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রামেকে পাখি হত্যার ঘটনা গড়ালো আদালতে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
রামেকে পাখি হত্যার ঘটনা গড়ালো আদালতে

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাখি হত্যার ঘটনায় শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বাদী হয়ে রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেছেন।

গত মঙ্গলবার মামলাটি করা হয়। তবে সেদিন মামলার বিষয়টি কেউ স্বীকার করেননি। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার বাদী বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

মামলা প্রশ্নে রাজশাহী বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে। তবে আদালত মামলাটি গ্রহণ করলেও কোনো আদেশ দেননি। আগামী রোববার আদেশ হতে পারে।

আর রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, আপনাদের কাছেই প্রথম মামলার কথা শুনলাম। বিষয়টি আমার জানা নেই।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রামেক হাসপাতালে ৮০টি বন্যপাখি হত্যা ও আবাসস্থল ধ্বংসে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি টাকা। আর পাখিগুলো হত্যায় পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে আরও দুই কোটি টাকার। মামলায় রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে। তবে কারও নাম উল্লেখ নেই।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খবর পান, রামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত পাখির বাসা কে বা কারা নষ্ট করছে এবং পাখির ছানা হত্যা করছে। খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে যান।

তিনি ঘটনাস্থলে ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি এবং ড্রেন নির্মাণের কাজ দেখতে পান। লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, গাছ কাটার ফলে পাখির বাচ্চাগুলো মাটিতে পড়ে। তখন স্থানীয় লোকজন, শ্রমিক এবং রোগীর দর্শনার্থীরা আনুমানিক ৬০ থেকে ৮০টি পাখির বাচ্চা জবাই করে বাড়ি নিয়ে যান।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাখি হত্যার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হয়। বন্যপাখি হত্যা করা, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করা, শিকার ও এ জাতীয় অপরাধ সংগঠনের সহায়তা করা, প্ররোচণা প্রদান ইত্যাদি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বাসস্থান ধ্বংস ও পাখিছানা হত্যা করে প্রচলিত ওই আইন অনুসারে অপরাধ করেছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে এই পিওআর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

শত শত শামুকখোল পাখি ২০১৫-১৬ সালের দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের বিভিন্ন গাছে থাকত। ওই সময় গাছ কেটে নির্মাণ কাজ করার কারণে পাখিগুলো বাসস্থান হারায়। এরপর পাখিগুলো রামেক হাসপাতালের আশপাশের গাছে গাছে আশ্রয় নেয়।

পাখির বিষ্ঠায় পরিবেশ নষ্টের কথা বলে গত বছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু গাছের ডালপালা কেটে ফেলা হয়। এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ করলে গাছের ডাল কাটা বন্ধ হয়। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড্রেন নির্মাণের জন্য একটি অর্জুন গাছ কাটা হলে উড়তে না শেখা শতাধিক পাখির বাচ্চা মাটিতে আছড়ে পড়ে মারা যায়। আর কিছু পাখির বাচ্চা জবাই করে নিয়ে যান শ্রমিক ও রোগীর স্বজনরা।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।