ঢাকা, সোমবার, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যাডমিন একাডেমির জমি বরাদ্দের লিজ বাতিলের দাবিতে সমাবেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
অ্যাডমিন একাডেমির জমি বরাদ্দের লিজ বাতিলের দাবিতে সমাবেশ

কক্সবাজার: কক্সবাজারের দরিয়ানগর এলাকায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন শুকনাছড়ির রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমি সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।  
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

সমাবেশে ২০টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।

সভায় বক্তারা বলেন, যে এলাকাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এটি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা। এছাড়াও বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের অনেক বিপন্নপ্রায় বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি কক্সবাজারের এ বনভূমি। এ বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা স্পষ্টত আইনবিরোধী এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। তাই অ্যাডমিন একাডেমির নামে দেওয়া অবৈধ বন্দোবস্ত দ্রুত বাতিল করতে হবে।

বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ। এরপরও ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ সংরক্ষিত এ বনভূমিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খাস জমি হিসেবে দেখিয়েছে। ঝিলংজা মৌজার এ বনভূমি যে খাস জমি নয়, এটা সরকারি নথিও রেকর্ডেই আছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব মালিকানাধীন ছাড়া যেকোনো জমি কাউকে দিতে হলে তা আগে অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় তো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি; বরং ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ একর জমি মাত্র ১ লাখ টাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কাজে রাষ্ট্রেরও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীরা যথেচ্ছভাবে ক্ষমতা, সরকারি অর্থ ও সম্পদের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের নতুন নতুন পথ নির্মাণ করছেন। কক্সবাজার নতুন প্রশাসন একাডেমি এমন আরেকটি উদ্যোগ মাত্র। জনগণের অর্থের অপচয় ও বিশাল একটি বন এবং এর জীববৈচিত্র্য নষ্ট করা ছাড়া এ থেকে কোনো ফল মিলবে না বলে সমাবেশে জানানো হয়।

বাপা কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-  কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির প্রধান নির্বাহী ও বেলার সদস্য ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন, বাপা কক্সবাজারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ১২ সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ক এইচ এম নজরুল, জন সুরক্ষা মঞ্চ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ইমাম খাইর, কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ইসমাইল সাজ্জাদ, বাপা নেতা শহীদুল্লাহ্ মেম্বার, মো. নেজাম উদ্দিন, কল্লোল দে চৌধুরী, দোলন ধর, শেখ সেলিম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি শামসুল আলম কেলো, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ইসলাম মাহামুদ, কক্সবাজার জেলা সভাপতি অ্যাভোকেট আবুহেনা মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম শ্রাবণ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেলের সভাপতি এম এ আজিজ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক উসেন থোয়েন, কক্সিয়ান ভয়েসের সভাপতি ইরফান উল হাসান, দরিয়া নগর গ্রিন ভয়েসের সভাপতি পারভেজ মোশারফ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সায়েম, টিম ইলেভেন কক্সবাজারের সভাপতি ইরফান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার, সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ওমর ফয়েজ হৃদয়, সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ ইমু, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস কক্সবাজারের সমন্বয়কারী জিমরান মো. সায়েক, টেকপাড়া রাখাইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি-উথান্ট অং, সাধারণ সম্পাদক জনি রাখাইন, রাখাইন ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মং সেন য়াইন, সাধারণ সম্পাদক জ জ ইয়ুদি, একতা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ওয়াসিম মাহমুদ অভি, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘ সভাপতি উসেন হেন, সাধারণ সম্পাদক জ জ, রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেনমি সাধারণ সম্পাদক ক্য লা প্রমুখ।

বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে আজকাল নানা অরাজকতা চলছে। সমুদ্র সৈকত দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে মাতারবাড়ি দখল চলছে। দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতায় চতুর্দিক থেকে আমরা ঘেরাও হয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, পাহাড় ধ্বংস করে সিভিল সার্ভিস একাডেমি করতে দেওয়া হবে না। কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা অবিলম্বে এ লিজ বাতিল করার দাবি জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।