ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাঁচানো গেল না সৎ মায়ের নিপীড়নের শিকার শিশু মরিয়মকে

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
বাঁচানো গেল না সৎ মায়ের নিপীড়নের শিকার শিশু মরিয়মকে শিশু মরিয়ম

শ্রীপুর (গাজীপুর): অবশেষে মারা গেল সৎ মায়ের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া আড়াই বছরের শিশু মরিয়ম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মারা যায় সে।

 

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার চাচা বাবু। তিনি হাসপাতালে শিশুটির দেখাশোনা করতেন।  

তিনি বলেন, নির্যাতনে পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে সংক্রমণ হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো শরীরে। চিকিৎসকরা শিশুটির অস্ত্রোপচারও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না।  

শিশু মরিয়ম আক্তার ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে। মোস্তফা কামাল শ্রীপুর পৌরসভার বেরাইদেরচালা গ্রামে ১৪ শতাংশ জমি কিনে বহুতল ভবন গড়ে তোলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দুবাই প্রবাসী। মরিয়ম তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান। পরে দুবাই প্রবাসী আলিফা আক্তার রিপার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে শিশুটির চার মাস বয়সেই প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয় তার। এসময় আলিফা আক্তারকে বিয়ে করে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন মোস্তফা কামাল। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেই থাকতো শিশু মরিয়ম। কয়েকমাস আগে মোস্তফা কামাল দুবাই চলে যান। পরে নিজ নামের এই বাড়িটি লিখে নিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন সৎ মা আলিফা। তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করে শিশুটির পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গ ক্ষত বিক্ষত করে দেন। পরে অবস্থা গুরুতর হয়ে পরায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।

এ ঘটনায় শিশুটির দাদা বাদী হয়ে তার সৎ মায়ের বিরুদ্ধে গত ১২ আগস্ট শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পরে তা মামলায় রূপান্তর হয়। গত ১৫ আগস্ট অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে।  
 
অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা (৩০) মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।

শিশুটির দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, তার দ্বিতীয় পুত্রবধূ একটু উগ্র প্রকৃতির। সে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অঘটনের চেষ্টা করেছে। তার ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় নাতনি মরিয়মকে নিয়ে আলিফা এই বাসাতেই থাকতো। শিশুটিকে দাদা-দাদির কাছে যেতে দিত না। এ বাসাটি নিজের নামে লিখে নিতে আলিফা নানা ধরনের ফন্দি করতে থাকে। গত ১১ আগস্ট ওই বাসায় গেলে দেখা যায় মরিয়ম খুব অসুস্থ। তার পায়ূ ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। এসময় আলিফাকে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একে কথা বলতে থাকে। এরপর মরিয়মকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ইতোপূর্বেও কয়েকবার মরিয়মকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে আলিফা। সেসময় তারা বিভিন্নভাবে সতর্ক করছিল তাকে। এর পরও তাদের কথা না শুনে শিশুটিকে এভাবে নির্যাতন করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার সৎ মায়ের।  

এ মামলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটির মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন। আগের মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে। শিশুটির ময়নাতদন্ত করা হবে। সে অনুযায়ী দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত শিশুটিকে যৌন নিপীড়নের কথা শিকার করেছেন আলিফা আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।